প্রাথমিক শিক্ষা একটি জাতির শিক্ষাক্রমের প্রধান ভিত

জানমালের নিরাপত্তা আগে? নাকি প্রজন্মকে প্রাথমিক শিক্ষার জ্ঞানে আলোকিত করার বিষয়টি আগে? দুটিই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শুধু পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের কারণেই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে না, বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষক সঙ্কট। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা হলো একটি জাতির শিক্ষাক্রমের প্রধান ও বুনিয়াদি ভিত।

পত্র-পত্রিকায় মাঝে মাঝেই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, অসংখ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে একজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে। কোথাও কোথাও সেই শিক্ষক একাই সবকয়টি ক্লাস, স্কুল প্রশাসন, এমন কী পিয়নের কাজও চালাচ্ছেন। বিধান অনুযায়ী, সরকারি প্রতিটি স্কুলে কমপক্ষে চারজন করে শিক্ষক থাকার কথা। একদিকে শিক্ষক সঙ্কটের কারণে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে, অপরদিকে বিদ্যালয়ে পুলিশ ফাঁড়ি করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা।

জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষক পুল নীতিমালা ২০১৪ অনুযায়ী উপজেলা-থানা পর্যায়ে পুল গঠন করা হয়। নিয়োগ বিধিতে নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ন্যাশনাল সার্ভিসের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই পুলে। পুলে অন্তর্ভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা সারাদেশে সর্বোচ্চ ২০ হাজারের মধ্যে থাকতে হবে। এই পুল অন্তর্ভুক্তিতে পাঁচটি শর্ত রয়েছে, যার একটি হলো- এই নিয়োগ নিয়মিত হবে না এবং এটা স্থায়ী হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করবে না। এমতাবস্থায় গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলে পুলের শিক্ষকেরা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে নতুন নিয়োগের পূর্বে তাদের নিয়োগের দাবি জানান। অতঃপর হাইকোর্ট শিক্ষক নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন, যা এখনো বহাল রয়েছে। পুলভুক্ত শিক্ষকদের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত এক বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকলেও ১৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১০ মাস আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরই পুলভুক্ত শিক্ষকদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। অথচ এসব পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য প্রায় ১০ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছেন।

আরও মুশকিলের বিষয় হলো- নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া এসব পদ যেমন শূন্য থাকছে, তেমনি নতুন প্রায় পাঁচ হাজার পদ শূন্য হয়ে পড়েছে গত এক বছরে। জানা যায়, ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৩৭ হাজার। ওই বছর জানুয়ারিতে আরও ২৬ হাজার বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়া হলে সর্বসাকুল্যে বর্তমানে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজারের অধিক। এসব স্কুলে কমপক্ষে ৩০ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। সার্বিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম।

প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের অবকাঠামোর সব কিছু থাকলেও যদি পাঠদানের উপযুক্ত ন্যূনতম শিক্ষক না থাকে, তবে কোমলমতি সিংহভাগ শিশুর শিক্ষার ভিত নড়বড়ে থেকে যাবে। তা হবে অপূরণীয় ক্ষতি। সুতরাং প্রায় তিন-চার বছর ধরে এ দু ধরনের শিক্ষক নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও আইনি যুদ্ধের সত্বর অবসান প্রয়োজন। অপরদিকে দ্রুত পুলিশ ফাঁড়ির অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য মুক্ত করে দেয়া দরকার।