প্রসঙ্গ: বন্দোবস্ত নেয়া স্থাপনাসহ সম্পত্তি ও শিক্ষক লাঞ্ছিত

 

শুধু শত্রু সম্পত্তিই নয়, বহু পরিত্যক্ত জমিও সরকারের হেফাজতে। যার অধিকাংশই বন্দোবস্ত দেয়া। এসব সম্পদ সম্পত্তি বহু মানুষ নানাভাবে নিজের করে নিয়েছে। শোনা যাচ্ছে সরকারের হেফাজতে থাকা মুজিবনগর কলেজের নামে বন্দোবস্ত দেয়া দু আড়াই বিঘা জমির ওপরের সেই জমিদারবাড়িটিও নাকি ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়ে গেছে। অবাক হলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে দাবিদারদের তরফে বলা হচ্ছে, পূর্বমালিক রাখাল তরফদারের উত্তরাধিকারীরাই তাদের দিয়েছেন। কলেজের নামে লিজ তথা বন্দোবস্ত নেয়া সম্পত্তি ওইভাবে নিলে কেন? নেয়াটা তো তোমাদের উচিত হয়নি! একজন শিক্ষকের এরকম প্রশ্নমাখা মন্তব্যে কি কোনো আইনজীবীকে উত্তেজিত হওয়া সঙ্গত?

শুধু কৌতূলহবশেই নয়, সঙ্গত কারণেও প্রশ্ন, যে জমি সরকারের নিকট থেকে দু যুগেরও অধিক সময় থেকে কলেজ বন্দোবস্ত নিয়ে ব্যবহার করছে, সেই জমি ও জমিদার বাড়িটা এতোদিন পর কেউ মালিক বলে দাবি করলে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয় যেমন, তেমনই মালিকানার দলিল দস্তখত সবই নতুন করে যাচাই-বাছাই করার দাবিও অযৌক্তিক নয়। যদিও প্রশাসনেরই কোনো না কোনো ব্যক্তির গুরুতর রহস্যজনক গাফিলতির কারণে ত্রুটি আদালতের কাছেও অনেক সময় অস্পষ্ট থেকে যায়। সুযোগ নেয় গোপনে হাতিয়ে নেয়া ব্যক্তিরা। এসব কারণে নতুন করে প্রশ্ন তুলে কলেজের একজন  শিক্ষক অবশ্যই অপরাধ করেননি। বরঞ্চ শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাটা অন্যায়, অপরাধ। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। এজাহারভুক্ত দু আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও অভিযুক্তদের তালিকার প্রথমে থাকা ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, দু আসামি ধরে আইনে সোপর্দ করা হয়েছে। অপরজনকেও ধরার চেষ্টায় ত্রুটি নেই যেমন, তেমনই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে প্রকৃত দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। খুবই ভালো কথা। এ কথা যেন কথার কথা না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পারলে পুলিশের প্রতি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। শ্রদ্ধাবোধে কিছুটা হলেও যে ঘাটতি আছে তা একজন কলেজ শিক্ষকের সাথে একজন আইনজীবীর বিরোধের নগ্ন প্রকাশ অন্যতম প্রমাণ।

শিক্ষক সমাজের আদর্শ। ফলে শিক্ষককে স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কে একটু বেশি বেশি করেই ভাবতে হয়, সজাগ থাকতে হয়। যদিও সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ববোধ অনেক সময়ই স্থান-কাল-পাত্র ভেদ ভুলিয়ে দেয়। বিবেকের তাড়নায় মৌখিক কৈফিয়ত তলব করা একজন শিক্ষকের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা সমাজের নৈতিকতা স্খলনের বিষয়টিই প্রকাশ পায়। অবশ্যই শিক্ষকের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত দ্রুত হওয়া দরকার। কলেজের নামে বন্দোবস্ত নেয়া সরকারের হেফাজতে থাকা জমি কিভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়ে গেল তাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিষয়টি জিইয়ে রাখা মানেই মুজিবনগর কলেজের উত্তপ্ত পরিবেশ আরও ভয়াবহ করে তোলা।