প্রসঙ্গ: তোষামোদ নামক বিষবাষ্পে তুষ্ট নেতার দৃষ্টি

তোষামোদে তুষ্ট করে বিশেষ দৃষ্টি কৃপার চর্চা পূর্বেও ছিলো। এখনও আছে। কম আর বেশি। সময় বদলানোর সাথে সাথে তোষামোদেরে ধরন, নামকরণ বদলানোটাও স্বাভাবিক। বদলেছেও অনেক। বদলানোর মধ্যে সমাজের সর্বনাশা বিষবাষ্পের উপস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের যে কোনো ক্ষতি রুখতে না পারার দায় যতোটা না অতীতের তার চেয়ে ঢের বেশি বর্তমানের। সে কারণেই সমাজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার। সে দায়িত্ব বর্তমান নেতৃত্বেরই।

সমাজের ভালো-মন্দ দেখার দায়ভার মূলত সমাজপতিদের ওপরই বর্তায়। যে সমাজের নেতার নেতৃত্বে দূরদর্শিতা থাকে, সেই সমাজ তার সুফল ভোগ করে। নেতা কে, কে দেবেন কোন সমাজের নেতৃত্ব? সেটা নির্ধারণ করে সমাজ। সে কারণে সমাজের দায়িত্বটাই বেশি। ভোটে নেতা নির্বাচনে ভুল করলে তার খেসারত সমাজকেই দিতে হয়। অবশ্য জনসেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের অর্পিত দায়িত্বভার গ্রহণের পর নিজের দূরদর্শিতা, দক্ষতা ও কাজে স্বচ্ছতা মেলে ধরার সুযোগ পান নেতা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমাজের কল্যাণ তরান্বিত করতে পারলে সমাজ তার মূল্যায়ন করে। অন্যথায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। থাক সে প্রসঙ্গ। আসা যাক, তোষামোদ নামক বিষবাষ্প প্রসঙ্গে। অবশ্যই যে নেতা বা ব্যক্তি ভালো কিছু করেন, তিনি প্রশংসার দাবি রাখেন। ভালো কাজে উৎসাহ দানে প্রশংসার মতো মূল্যবান দাওয়াই আর নেই। কিন্তু প্রশংসা যখন তোষামোদের বেড়াজাল সৃষ্টি করে? সেটাই মূলত বিষবাষ্পে রূপ নেয়। যেমনটি এবার পৌর নির্বাচনের পর এলাকার কয়েক পৌর মেয়রকে যেভাবে সংবর্ধনা দেয়ার হিড়িক পড়েছে তা বিষবাষ্পের ব্যাপকতারই বহির্প্রকাশ বললে ভুল বলা হয় না। কেননা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেবায় নিয়োজিত হওয়ার বদলে সংবর্ধনার নামে তোষামোদের আয়োজনে হাজির হয়ে নির্বাচিত হওয়ার প্রশংসায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। এ আয়োজনকে সমাজের সাধারণ মানুষ, তথা যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে সেবার দায়িত্ব দিয়েছেন তারা কোন দৃষ্টিতে দেখছেন? নির্বাচিত হয়েই নেতার তৃপ্ত দৃষ্টি তোষামোদেই যদি হয় অন্ধ, তা হলে কি দক্ষতা মেলে ধরার তাগিদ থাকে? তোষামোদকারীদের ভিড়ে নেতার কখন যে পতনের শুরু হয়ে যায় কে জানে!

অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হওয়াটা কৃতিত্বের। নেতৃত্বে কতোটা যোগ্য তা ফুটে ওঠে কর্মে। নির্বাচিত হওয়াটা আখের গোছানোর সুযোগ নয়, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের যোগ্যতা, প্রতিভা, মেধা, প্রজ্ঞাসহ জনতার প্রতি কতোটা দরদ তা মেলে ধরার সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে তোষামোদে তুষ্টির চেয়ে দৃষ্টিটা মুক্ত রাখা জরুরি। তোষামোদকারীদের বেড়াজালে বন্দি দৃষ্টি সমাজকে পিছিয়ে দেয়। সে কারণেই বন্ধ করতে হবে তোষামোদের আয়োজন, রুখতে হবে বিষবাষ্প। এ দায়িত্বটা যাকে ঘিরে তোষামোদ, তারই।