প্রশ্নপত্র ফাঁসে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশিত

 

পরীক্ষানেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের জন্য। কিন্তু প্রায় প্রতিটিপরীক্ষা এখন প্রহসনেপরিণত হয়েছে। পরীক্ষার আগেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্র ফাঁসেরকৃতিত্ব দেখাচ্ছে যারা,তাদের পকেটে জমা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রশ্নপত্রফাঁস কারো জন্য পৌষ মাস হলেও সত্যিকারের মেধাবীদের জন্য সর্বনাশ হয়ে দেখাদিচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এ ঘটনা উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।চলতি বছরঢাকা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয়পত্র ও ইংরেজিপ্রথমপত্র ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগও রয়েছে।সে সময় শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নাকচ করে এঘটনা কিছু সুবিধাভোগীর গুজব বলে মন্তব্য করেন। তবে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রেরদু সেট প্রশ্ন মুঠোফোনের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েপড়ছে এমন অভিযোগে নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিতও করা হয়। অন্যদিকে প্রশ্নপত্রফাঁসের ঘটনায় গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তদন্তকমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে,যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতাদেরচিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
লক্ষ্যণীয় যে,দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ফাঁস হয়েযাওয়া প্রশ্নপত্রের ওপর ভরসা করে কেউ কেউ সহজেই বৈতরণী পার হচ্ছে। মেধাবীনা হয়েও তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভর্তি হচ্ছে মানসম্মতশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দুর্নীতির সুবাদে চাকরির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে।আর সত্যিকারের মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রাপ্য সুযোগ থেকে। কারণ এক অসমপ্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। পরীক্ষার্থীদের একাংশ ফাঁস হয়ে যাওয়াপ্রশ্নপত্র কিনে সঠিক জবাব রপ্ত করে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বৃহত্তর অংশকেপরীক্ষা দিতে হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিকতার কঠিন পথে।পিএসসি,জেএসসি,এসএসসি,এইচএসসি এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েও যে কারণেসংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,স্কুল-কলেজের ভর্তি পরীক্ষানিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ চিত্র চরম অবক্ষয়ের। বিষয়টিলজ্জার এবং গ্লানির। উদ্বেগের তো বটেই। ফলে এর পুনরাবৃত্তি রোধই কাঙ্ক্ষিত।কিন্তু তদন্ত কমিটি যদি হোতাদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় তখন তদন্ত কমিটিরগ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ অবস্থা কখনো এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধেসহায়ক হতে পারে না বলেই আমরা মনে করি।
বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার মধ্যদিয়ে এটা সহজেই প্রতীয়মান হয়অবক্ষয়কারীদের শিকড়বাকড় কতোটা বিস্তৃত ও সামগ্রিকভাবে সমাজচিত্র কতোটা বিবর্ণহয়ে পড়েছে। এটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং এ ব্যাধি যেটোটকা কোনো দাওয়াইয়ে সারবে না, তাও অনুধাবন করা কষ্টকর নয়। অতীতেস্কুল-কলেজ এবং বিসিএসসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসেরকেলেঙ্কারি বারবার উদ্ঘাটিত হয়েছে বটে,কিন্তু এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করাযায়নি। কেন যায়নি,তার সদুত্তর মেলা দুরূহ কোনো বিষয় নয়। অতীতে যতোবার এধরনের ঘটনা ঘটেছে,তারপর কিছুদিন মিডিয়ায় হইচই চলেছে এবং সে কারণেইপ্রশাসনের সাময়িক তৎপরতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এক পর্যায়ে যখন সব থেমেযায়, তখন অশুভশক্তি তাদের হীনকর্ম সাধনে আবার তৎপর হয়ে ওঠে। তবে এবারশিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর সরকারি কঠোর পদক্ষেপ কেঁচোখুঁড়তে গিয়ে সাপের সন্ধান পায়। বিজি প্রেসের মতো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ওঅধিক নিরাপত্তাসম্পন্ন কেন্দ্রটির অভ্যন্তরের উৎকট চিত্রও প্রকাশিত হয়েপড়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিজি প্রেসের গোপনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যাতদন্তের একটি ভালো দিক। তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে তাকিছুটা হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সহায়ক হবে-এমনটি বলা যেতে পারে।সার্বিক বিবেচনায় আমরা বলতে চাই,যে দুষ্টচক্র শিক্ষা,পরীক্ষা কিংবাকর্মসংস্থান ব্যবস্থা-প্রায় সবকিছুতেই ছোবল মারছে, তারা যে দেশ-জাতির কতোবড় সর্বনাশ ঘটিয়ে চলেছে, তা বর্ণনায় শেষ করার নয়। যে কোনো মূল্যে এদেরখুঁজে বের করে শাস্তি দেয়াটাই সমীচীন। তবে তদন্ত কমিটি কেন প্রশ্নপত্রফাঁসের হোতাদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে,পাশাপাশি তাও খতিয়ে দেখারযৌক্তিকতা রয়েছে।