প্রকৃত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি

 

সমাজ সুন্দর করতে হলে শুধু কি পুলিশের ওপর ভরসা করে বসে থাকলে চলে? নাকি আইনের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হয়? পুলিশ আইনের পাশাপাশি দায়িত্বশীল সকলকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সাথে দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হতে হয়। অনিয়ম দুর্নীতি পরিহার করতে পারলে পুরো সমাজটাই যে পাল্টে যাবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দুর্নীতি দূর হবে কীভাবে? দুর্নীতি তো আর রাস্তার পাশের ময়লার স্তূপ নয় যে, ঝাঁড়ু দিলেই পরিষ্কার হবে! আইন পারে অপরাধপ্রবণতা রোধ করতে, আর সামাজিক দায়বদ্ধতা উপলব্ধি পারে দায়িত্বশীল করতে। বিয়ে পড়িয়েও কাজির তা অস্বীকার করা বা কাবিননামার দেনমোহর বিয়ের পর দস্তাবেজে অদল বদল করার প্রবণতা দূর করতে হলে কী করতে হবে?

অনিয়ম দুর্নীতির প্রবণতা পেয়ে বসেছে বলেই বিয়ে পড়িয়েও অর্থের বিনিময়ে কোনো কোনো কাজি বেমালুম অস্বীকার করেন। সমাজের সকল কাজি, সকল ইমাম অবশ্যই অনিয়মদুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। কিছু আছে যারা অর্থ পেলে বিয়ে শুধু অস্বীকারই নয়, বিয়ের রেজিস্ট্রার খাতাও গায়েব করে দেন। এরকম অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উত্থাপিত হয়। সম্প্রতি স্বয়ং আদালতই সঙ্ঘবদ্ধ একদল মুখোশধারীর মুখোশ উন্মোচন করেছেন। এক কাজিসহ তার তিন সহযোগীকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র বিজ্ঞ বিচারক চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও আদেশ দিয়েছেন। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, দেশের প্রচলিত শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইন বেশ কঠোর। এ আইনে আনিত সকল মামলাই যে সঠিক তা হলফ করে বলা না গেলেও বিচারপ্রার্থীদের অনেকেই যে ন্যায় বিচারের জন্য আইনের আশ্রয় নেন তা বলাই বাহুল্য। বিয়ে হয়েছে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেছে। মামলা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে বিয়ে অস্বীকার করলেন স্বামী। বিয়ে এবং বিয়ের কাগজসহ উভয়পক্ষের তথ্য উপাত্ত প্রমাণ গ্রহণ করতে গিয়েই আদালতের বিচক্ষণ পদক্ষেপ। চুয়াডাঙ্গার এক প্রবীণ বিশিষ্ট আইনজীবী এ মন্তব্য করে বলেছেন, অসাধু কিছু কাজির কারণে অসংখ্য নারী পথে বসেছে। সংসারও ভেঙেছে। বিয়ে পড়ানোর পর টাকা পেলেই যেমন দেনমোহরের অঙ্কটা পাল্টে দেন, তেমনই কেউ কেউ পুরো বিয়েটাই অস্বীকার করে বসেন। খাতার পাতা ছিঁড়ে ফেলাসহ বিয়ের তথ্য রাখা দস্তাবেজও গায়েব করার তথ্য রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলায় বিষয়টি বিজ্ঞ বিচারকের দক্ষতায় কাজিদের অনিয়মের খণ্ডাংশ উঠে এসেছে। মসজিদের একজন ইমাম। তিনি কাজি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তার রয়েছে বেশ কয়েকজন সহযোগী। এরা বিয়ে পড়িয়ে প্রথমে তা অস্বীকার করতে চাইলেও পারেননি। পারেননি তাদের অনিয়ম দুর্নীতি আড়াল করতে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কাজি ও সহকারী কাজিদের মধ্যে পেয়ে বসা দুর্নীতির প্রবণতা সঙ্কুচিত হবে। উচিত শাস্তি হলে রক্ষা পাবে সমাজ।

কাজি, ইমাম, পুরহিতদের সামাজিক দায়িত্ব অনেক। তাদেরই কেউ কেউ যখন লেবাসের আড়ালে দুর্নীতি করে তখন সুন্দর সমাজ গঠনের গতি চরমভাবে ব্যাহত হয়। বিয়ে হলো ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে, টাকা নিয়ে তার অঙ্ক কমানো বা বাড়ানোটা অবশ্যই গুরুতর অপরাধ। আর বিয়ে পড়ানোর পরও তা অস্বীকার করা? এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। বাল্যবিয়েও দেদারছে সম্পাদন করেন অনেকে। অনিয়ম দুর্নীতি রুখতে আইনের শাসনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনও অনিবার্য। অপরাধ প্রবণতা রোধে প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং প্রকৃত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।