পুলিশকে কি নন্দ ঘোষ হওয়া মানায়?

নন্দ ঘোষের নিশ্চয় কিছু দোষ ছিলো, তা না হলে সব দোষ তার ওপর পড়বে কেন? যেমন আমাদের দেশের পুলিশ। বহুদিন ধরে নন্দঘোষের মতোই দশা। পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয় সমাজের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা ও আমজনতার জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। জনগণের অর্থেই পুলিশের বেতন হয়। দিন দিন পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর অভিযোগ উত্থাপন হলেও তেমন প্রতিকার লক্ষ্য করা যায় না। অথচ পুলিশ বাহিনীর ওপর সমাজের সার্বিক নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা নির্ভর করে। পুলিশ নিরাপত্তার প্রতীক, জনগণের আশ্রয়স্থল। অথচ এই বাহিনীর কারো কারো জন্য আস্থাহীনতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এরপরও বলতেই হয়, কোনো কোনো কর্মকর্তা-সদস্যের দায়িত্বশীলতার কারণে সমাজ এখনও সুশৃঙ্খল। এ কারণেই যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন হয়, যারা নিজের লজ্জা আড়াল করতে গিয়ে বলেন, ‘জানেনই তো- পুলিশ ঘুষ খায়, তা আবার পত্রিকায় লেখেন কেন? লিখে কী হয়!’ এ ধরনের মন্তব্য কি গোটা পুলিশ বাহিনীকেই খাটো করে না? প্রকাশ্যে ঘুষ চাওয়াটা? রেওয়াজটা সমাজের জন্য সর্বনাশা।
অবশ্যই সকল পুলিশ দোষ করে না। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় দোষারোপেও পড়েন কেউ কেউ। যেমন গতকালই তার একটি চাক্ষুস প্রমাণ নিয়ে চুয়াডাঙ্গারই কয়েক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য, মোটরবাইকটার গতি বাড়িয়ে সাপের মতো ঘোরাতে গিয়ে পড়লেই তো পুলিশের ওপর দোষ চাপতো। বলা হতো, পুলিশের ধাওয়ায় উল্টে পড়ে নিহত। গতকালই দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার তৃতীয় পাতায় প্রকাশিত, ‘পুলিশের ধাওয়ায় দু আরোহী নিহত’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অভিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে গিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলচালকসহ তিন জন। ঘটনাটি ঘটে রোববার বিকেল ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের নূরনগর-জাফরপুরের মধ্যবর্তী নবনির্মিত স্টেডিয়ামের সামনে। ট্রাফিক পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাসহ একদল পুলিশ সদস্য যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এমন সময় জাফরপুরমুখি একটি রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল থামানোর জন্য ইশারা করে পুলিশ। পুলিশের ইশরায় সাড়া দেয়া দূরের কথা, মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে সাপের মতো ঘুরিয়ে ছুটে পালানোর ধরন দেখে মনে হলো ওরা পুলিশকে থোড়াই কেয়ার করলো। শুধু তাই নয়, পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও অল্পের জন্য পড়েনি। পড়লে? হয়তো সন্তানহারা হতে হতো পিতা-মাতাকে। ওদের বয়স দেখে এরকমই মন্তব্য প্রত্যক্ষদর্শীদের।
পুলিশকে থোড়াই কেয়ার করার আড়ালে অবশ্যই পুলিশেরই ব্যর্থতা বা কোনো কারণে নমনীয়তা। আবার পুলিশের কর্মদক্ষ কর্তব্যপরায়ণ কর্মকর্তা সদস্যদের কারণেই পুলিশের সফলতা ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল । এ কারণেই পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে পুনঃপুন তাগিদ উত্থাপিত হয়। নানা কারণেই পুলিশ কখনো কখনো পারে না। যেটা পারে না সেটার দোষ অধিকাংশ সময়ই রাজনীতির ওপর দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা হয়, পার পাওয়াও যায়। আর ঘুষ? ওটাও ওরকমই অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চলে। যে দোষ থেকে পার পান না পদস্থ কর্মকর্তারা। এই অবস্থার মধ্যে থানার ওসি যদি একজন আশ্রয়প্রার্থীর কাছে অর্থ চেয়ে না পেয়ে উল্টো হামলাকারীদের পক্ষে কথা বলেন তখন সচেতন সমাজের বিবেক গুমরে কাঁদে। পুলিশেরই কোনো কোনো কর্মকর্তাকে হতে হয় অসহায়। অন্যায়ের কাছে তাকেও কখনো কখনো আত্মসমর্পণ করতে হয়।
অবশ্যই অপবাদ ঘোচাতে আত্মসমালোচনায় শনাক্ত করতে হবে নিজেদের দোষ-ত্রুটি। শোধরানোর সুযোগ দিয়ে শুরু করতে হবে শুদ্ধি অভিযান।