পিতা-মাতার কাজে সহযোগিতা করা অমর্যাদাকর নয়

 

পড়াশোনা করলে পিতার কাজে সহযোগিতা করা যাবে না? পিতা সংসারের হাল টানছেন। সন্তানেরা সে কাজে সহযোগিতা করলে পিতা শুধু খুশিই হন না, সংসারে সচ্ছলতা ফেরে। অবশ্য পিতাকেও সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানাতে হয়। সন্তানকে কখন বিদ্যালয়ে, কখন শিক্ষকের কাছে ছুটতে হচ্ছে সেদিকেও নজর রাখতে হয়। পিতা-মাতার যেমন সন্তানের লেখাপড়ার দিকে নজর রাখা দরকার, তেমনই সন্তানেরও পিতা-মাতার কষ্টটা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। যে লেখাপড়া অন্যের কষ্ট উপলব্ধি করতে শেখায় না, করে না কর্তব্যপরায়ণ সে লেখাপড়ার দরকার কী? ক্ষুব্ধ পিতা এ প্রশ্ন তুলতেই পারেন। তাই বলে বই পুস্তকে আগুন দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

ক্ষোভের বহির্প্রকাশ একদিনে ঘটে না। ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে গেলে তার বহির্প্রকাশ ঘটতে পারে। তার আগেই ক্ষোভের আগুন নেভানোর মতো বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, অধিকাংশ অভিভাবকই চান, সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা। দুটি অভাব সে পথে অন্তরায়, একটি আর্থিক, অপরটি সচেতনতা। বিগত দিনের তুলনায় অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। বেড়েছে সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলার পরিবেশ। আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দূরে থাকার কারণে আসা-যাওয়ার পথে কেটে যেতো বেলা। বাড়ির কাজে আগ্রহ থাকতো না। এখন? হাতের কাছেই বিদ্যালয়। তাছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করছে সরকার। নারীশিক্ষা সম্প্রসারণে সরকারের পদক্ষেপসমূহ অনন্য দৃষ্টান্ত। এরপরও অনেক অভিভাবক আছেন যারা সন্তানকে শিক্ষিত করার বদলে তাদেরকে মাঠে নিয়ে কাজ করাতেই বেশি আগ্রহী। এ ধরনের মানসিকতা লালন করা অভিভাকদের মাঝে যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব তা বলাই বাহুল্য।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার বড়বলদিয়া গ্রামের এক পিতা ক্ষুব্ধ হয়ে তার ছেলের বইপুস্তকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। মাঠে ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে, আর ছেলে লেখাপাড়ার অজুহাতে মাঠের দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছে না। মূলত এ কারণে দরিদ্র পিতা ক্ষব্ধ হয়ে ক্ষতির দিকে পা বাড়িয়েছেন। লেখাপড়া পিতা-মাতার প্রতি সন্তানকে কর্তব্যপরায়ণের তাগিদ দেয়। আর যদি সেই তাগিদে ঘাটতি থাকে তবে ধরেই নিতে হবে, শিক্ষাগ্রহণে ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষাদানেও অপূর্ণতা বিদ্যমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও এদিকে বিশেষ দৃষ্টি নিবন্ধ সময়েরই দাবি। পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়তে হলে সর্বক্ষেত্রেই দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন। পিতার কাজে সহযোগিতা দক্ষতা অর্জনে সহায়ক।