পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়টি পাক অধিক গুরুত্ব

এক সময় এক আনায় অনেক কিছু হতো। প্রবীণদের মুখে এখন এ গল্প শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার কোনো কারণ নেই। সময় যেমন প্রবাহমান, তেমনই অর্থনীতিও চলমান। কালক্রমে সেকেলে হয়ে গেছে এক আনা। এখন আধুলি বা আট আনাও অনেকটা মূল্যহীন। হবেই তো, তখন দিনমজুরি কতো ছিলো? এখন কতো? একদিকে মূদ্রার মান কমে অপরদিকে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মজুরিও বাড়ে। তখনই দীর্ঘশ্বাস বাড়ে যখন সমাজের অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী। আমাদের সমাজে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না।

অবশ্যই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি রোগের লাগাম টেনে ধরা দরকার। এ দায়িত্বের সিংহভাগ সরকারের হলেও ভোক্তা তথা আমজনতারও দায় কম নয়। কারণ, পূর্বের তুলনায় এখন জনসংখ্যা বেড়েছে কয়েকশ গুণ বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় দরদী না হওয়ার কারণেই এক সময়ের মাছে-ভাতে বাঙালি এখন ডালে-ভাতে বললেও অতোটা জোর দেয়া দুস্কর। কারণ, দারিদ্র্য সীমার নিচে এখনও বহু পরিবার। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। একটি ইলিশ কিনতে হলে কয়েক মণ ধান বিক্রি করতে হয় কৃষককে। দিনমজুরের পারিশ্রমিক বেড়ে এখন দু আড়াইশ টাকা হলেও তাতে ৩/৪ জনের সংসারে দু বেলা দু মুঠো ভাত জোটানোই দুরূহ। মাছ মাংস জুটবে কীভাবে? অবশ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার বাস্তবমুখি পদক্ষেপ দরকার। তারই খণ্ডাংশ হিসেবে বাজারে মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার বিধান রয়েছে। বিলম্বে হলেও চুয়াডাঙ্গায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য তালিকার ফলক বড় বাজারে লাগানো হয়েছে। এ উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদ পাবার দাবি রাখে। তবে তদারকির পথে আর মূল্য তালিকা লেখার বোর্ড যেন ধুলোয় ধূসর হয়ে না ওঠে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

‌                মূল্যতালিকা দেখে ভোক্তাদের দ্রব্যসামগ্রী কেনার মতো যেমন সচেতনতা দরকার, তেমনই দরকার কোনো কিছুর মূল্য হঠাৎ আকাশচুম্বি তথা অস্বাভাবিক হলে তা কিনতে হুড়োহুড়ির চেয়ে মুখ ফেরানো। একই সাথে বাজার তদারক কর্তাদেরও এদিকে বিশেষ নজর দিয়ে কেন মূল্য অতো চড়লো তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। ভোক্তা এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা অবশ্যই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে সহায়ক হতে বাধ্য। এতে হঠাত অর্থ হাতিয়ে নেয়া ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীরাও কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লোভের মানসিকতা পরিহার করতে বাধ্য হবে। যেমন, ইলিশ। এবারের বর্ষবরণের পূর্বে বাজারে যখন ইলিশের আকাল হলো তখন কেন ইলিশ নিয়ে আদিখ্যেতা? এরকম অনেক কিছুই রয়েছে যা ইচ্ছে করলেই পরিহারের মাধ্যমে দ্রব্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা অসম্ভব নয়। যদিও ইলিশ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নয়। উদাহরণ। পেঁয়াজ রসুন, ডাল, নূন, তেলচিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু দ্রব্যসামগ্রী রয়েছে যার মূল্য রাতারাতি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সঙ্কট হতে পারে তা দুরদর্শিতার সাথে আগাম আমদানির পদক্ষেপ নিতে হবে। এ দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার দর যেমন সর্বস্তরের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা দরকার, তেমনই দারিদ্র্য দূরীকরণে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তোলা অপরিহার্য। কর্মসংস্থানের অভাব না থাকলে শ্রমের যেমন যথাযথ মূল্য বাড়ে, তেমনই দূর হয় দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা। দেশে যেটুকু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় তার প্রায় সবই রাজধানী কেন্দ্রিক। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান গড়ে তোলার মতো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা খুবই জরুরি। বাজার দর নিয়ন্ত্রণ আর কর্মসংস্থানের জোগানই পারে দেশের চিত্র পাল্টে দিতে। ধনী দরিদ্র্র বৈষম্য দূরীকরণে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথাই অধিক গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।