পাচার হওয়া নারী প্রবাসে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার

মধ্যপ্রাচ্য মসুলমান অধ্যুষিত। এক সময় দাস প্রথার প্রচলন ছিলো। সেই প্রথা যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার এতো হিজরি পরও পুরোপুরি বিলিন হয়নি তা নির্মম নির্যাতনের শিকার সালমা অন্যতম উদাহরণ। সৌদি আরবে এখনও মানুষ কেনা-বেচা হয়? চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার শিবপুরের সালমার শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের দগদগে দাগ নিয়ে দেশে ফিরে যে বর্ণনা দিয়েছে তা একজন ইসলামধর্মালম্বীর জন্য বিশ্বাস করাও কঠিন। তবে কি সালমার অভিযোগ অনুযোগ মনগড়া? অবশ্যই না। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালমা খাতুনের অভিযোগ অনুযোগের পক্ষে যথেষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে। তাকে বিক্রি করা দালাল হাবুসহ তার সহযোগীরা এখনও ঢাকায় প্রতারণার দোকান খুলে দিব্যি বসে!

অবশ্যই একটি দেশের সকল মানুষ একমনের নয়। এরপরও এমন কিছু বিষয় থাকে যার দায় পুরো সমাজের ঘাড়েই পড়ে। সমাজ তার দায় এড়াতেও পারে না। যেমন দাস প্রথা। সৌদি আরবে দাসপ্রথা ধরে রাখা পরিবারটি বাংলাদেশের নারীপাচারকারীদের নিকট থেকে সালমা খাতুনকে দু বছরের জন্য কিনেছিলো। যারা সালমাকে পাচার করেছে তারা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়েই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। যদিও অসচ্ছল কোনো পরিবারের নারী-পুরুষকে কাজের বিনিময়ে মাস গেলে বেতন পাওয়ার প্রস্তাবকে ‘প্রলোভন’ বলা সঙ্গত নয়। চাকরি জুটিয়ে দেয়ার কথা বলা মানেই প্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি। ওই প্রতিশ্রুতির মধ্যেই যে প্রতারণা তা আমাদের সমাজের সালমাদের বুঝে ওঠার মতো সচেতনতার আলো ছড়াতে না পারার দায় কি সমাজ এড়াতে পারে?

পরদেশের মুদ্রা নিয়ে আমাদের যে পোদ্দারি, তা প্রধানতঃ ওই প্রবাসে পরিশ্রমের ফসল। জনসংখ্যা বিস্ফোরণকে যেদিন থেকে জনশক্তির দেশ হিসেবে দেখা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই জনগণকে প্রশিক্ষণের প্রতি গুরুত্বও বেড়েছে। যদিও আমরা এখনও পর্যন্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করেই বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারিনি। বর্তমান সরকার বিদেশে জনশক্তির কিছু বাজার গড়ে তুলেছে বলে ঘোষণা দিলেও সকলের জন্য সে পথ এখনও সুগম নয়। এই সুযোগটাই যে এক শ্রেণির অর্থলোভী প্রতারক আদমব্যাপারী নিচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। শুধু সালমা নন, ক’দিন আগে দামুড়হুদা উজিরপুরের আকলিমা খাতুন মধ্যপ্রাচ্য থেকে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছে। কোটচাঁদপুরের এক নারীকে তো দেশের এক প্রশিক্ষণ শিবিরেই নির্যাতনের বহর দেখিয়ে ছাড়া হয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার লোভে দেশের নারী বা পুরুষদের বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়া মানে জাতির সর্বনাশ ডেকে আনা। স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার যেমন প্রয়োজন, তেমনই দেশেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে প্রয়োজনে ভিনদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার। দেশের মানুষ বিদেশে যাওয়ার বদলে দেশেই শ্রম বিকানোর সুযোগ পেলে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথ সুগম হতে বাধ্য। তাছাড়া বিদেশে আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। পাচারকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার। কাল-বিলম্ব না করেই পাচারকারীদের সহযোগী এজেন্সির অনুমাদনপত্র বাতিল করা জরুরি।

পুনশ্চ: দাস-দাসি বানানোর জবাব জবরদস্তিতে নয়, স্বনির্ভতা অর্জনে।