পরনির্ভরতা কাটিয়ে উঠে স্বনির্ভরতা অর্জনই উত্তম

 

ঈদুল আজহা আসন্ন। এরই মাঝে গবাদি পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। কৃষকদের ঘরে ঘরে পালন করা গরুও বিক্রির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মোটাতাজা করে কোরবানির পশু হাটে বিক্রির রেওয়াজ বেশ কয়েক বছর ধরেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে দেশে গরু-মোষের চাহিদা পূরণে পড়শি দেশ থেকে পাচার করে আনা তো বছর জুড়েই চলে। কোরবানি সামনে রেখে তা বেড়ে যায়। একই সাথে বেড়ে যায় সীমান্তে বাংলাদেশ নাগরিক নিহতের ঘটনা। পড়শি দেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ার খবর? গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দামুড়হুদার দু সীমান্ত থেকে দুজন বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ওরা ফিরবে কবে? অনিশ্চিত।

 

স্বনির্ভরতা অর্জনের অর্থ পরনির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা। কীভাবে? চাহিদা মতো উৎপাদন এবং তা সরবরাহ। দেশে গোমাংসের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মতো উৎপাদন নেই। পড়শি দেশে গরুকে মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হয়। ফলে দু দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে তা বৈধভাবে দেশে আমদানিরও তেমন সুযোগ মিলছে না। মূলত সে কারণেই পাচার করে আনার পর সীমান্তে করিডোর শুল্ক দিলেই গরু-মোষের বৈধতা দেয়া হয়। ভারতীয়রা সীমান্তে গরু মোষ পৌছে দেবে, বাংলাদেশি গরুব্যবসায়ীরা তা নিয়ে করিডোর করে দেশের পশু হাটগুলোতে তুলবে। এভাবে কি হচ্ছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গরুপাচারের কথা বলে সীমান্তে ভিড় জমিয়ে মাদক, বোমা তৈরির বারুদসহ সরঞ্জামাদি পাচার করে আনা হচ্ছে। কিছু আছে যারা গরুপাচার করে আনতে গিয়ে বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ছে। কেউ কেউ মারাও পড়ছে। মৃত্যুর চিত্রটা নির্বিচারে নৃশংস। সীমান্তে এভাবে মৃত্যু জাতিসত্তায় সোচ্চার বিবেকগুলো দংশিতই হয়। ফুটে ওঠে অসহায়ত্ব। চাহিদা মতো উৎপাদনে অক্ষমতাকে নিশ্চয় পাচার করে এনে পূরণকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মেনে নেয়া যায় না।

 

অবশ্যই চোরাইপথ পরিহার প্রয়োজন। বৈধভাবে আমদানি করতে না পারলে দেশে উৎপাদনের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন গবাদিপশু পালনে দেশের কৃষি পরিবারগুলো কেন অনাগ্রহী হলো তা জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। পশুসম্পদ বিভাগের অপ্রতুলতা কাটিয়ে ঘরে ঘরে পশুপালনে উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজন মোড়ক হ্রাসে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। দেশে গোমাংসের চাহিদা মতো উৎপাদন করতে না পেরে পড়শি দেশ থেকে পাচার করে এনে তা পূরণের পথ পরিহারই শ্রেয়। দেশের মানুষেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মূল্যবৃদ্ধিতে তা পরিহারের মানসিকতা যেমন গড়ে তোলা দরকার, তেমনই দরকার স্বনির্ভরতা অর্জনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা।