পবিত্র রমজান এলেই বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম!

 

প্রতি বছরই রমজান শুরু হওয়ার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যায় বা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, হচ্ছে না। ইফতার সামগ্রীর দাম ইতোমধ্যেই আকাশচুম্বি হয়েছে। এবারও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি না করার ব্যাপারে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতিদিয়েছেন,বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বিগত দিনেও লক্ষ্য করা যায়নি, এবারও নয়।

অপরদিকে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হলেও তা যে বাজারনিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতি বছর রমজান মাস এলে দ্রব্যমূল্য চড়া হবে তা কিছুতেই মেনেনেয়া যায় না। জনসাধারণকে তথা ভোক্তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার এ প্রবণতাব্যবসায়ীদের পুরোনো কৌশল।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের আগ্রহ থাকলেও ভোক্তা সাধারণ তার সুফল পায় না কেন? বাজারসরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার ইতোমধ্যে পাঁচ পণ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারিকরেছে। আবার টিসিবির মাধ্যমে দেশব্যাপি পণ্য বিক্রি করা হলেও বাজারে পণ্যেরদাম ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এক সপ্তার ব্যবধানে শুধু বেগুনের দামই বেড়েছেদ্বিগুণ। সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। ৫৮ টাকার ছোলা বিক্রিহচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। রমজান মাসে এ পণ্যগুলোরই অধিকচাহিদা থাকে। মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের যে নাভিশ্বাস উঠবে তা নতুনকরে বলার কিছু নেই। অথচ রমজান সিয়াম ও সংযমের মাস। সারা মাস সংযম পালনের পরউদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। অবাক হলেও সত্য যে, এ মাসে বাজারের সংযম থাকবে না, থাকে না। সকলেই যেনো অধিক মুনাফার জন্যই উদগ্রীব। প্রতি বছর দাম বাড়ানোর নেপথ্যে ব্যবসায়ীরা পণ্যের সরবরাহের ঘাটতির কথাবলেন। এবারো বৃষ্টির অজুহাত দিয়েছেন। প্রতি বছর মূল্য বাড়ানোর প্রবণতার প্রেক্ষিতে প্রশ্নজাগে, রমজান মাসেপণ্যের দাম বাড়ানোর রোগ কি কোনোদিন যাবে না? দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ কি এদের হাতে জিম্মি হয়েইথাকবে? বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও অন্যান্যসংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা নিশ্চয়ই বাজারের দৈনন্দিন হালচাল সম্পর্কে অবহিতআছেন। এরপরও তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেন না। বিষয়টি অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে।

চাহিদার সাথে সরবরাহের মিল থাকলে পণ্যের দামে হেরফের হওয়ার কোনো কারণ নেই।অথচ অতিমুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা এ তত্ত্বের ধার ধারেন না। ফলে বর্তমানঅবস্থায় যারা অনিয়ম করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।পণ্যের সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর ব্যবসায়ীরা যেভাবে মুনাফারদুর্বৃত্তায়ন করে চলেছেন,একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তা কাঙ্ক্ষিত হতে পারেনা। তাছাড়া ভোক্তাদেরও বিশেষ সতর্ক হওয়া দরকার। হুড়োহুড়ি মানসিকতা দূর করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করলে তা থেকে মুখ ফেরানোর মধ্যদিয়ে নীরব বিপ্লব ঘটাতে পারেন কি-না তাও ভাবতে হবে, ভাবাতে হবে। কেন না- সরকার যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সফলতা পাচ্ছে না, তখন ভোক্তাদেরই বাস্তবমুখি হওয়া উচিত।