নৈতিকতার স্খলন নাকি নেশাগ্রস্ততায় মনুষ্যহীনতা?

নৈতিকতার স্খলন নাকি নেশাগ্রস্ততায় মনুষ্যহীনতা? দুটির একটি নিশ্চয়। তা না হলে একজন বৃদ্ধার নিকট থেকে বয়স্কভাতা বাবদ ব্যাংক থেকে তোলা ১২শ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় কীভাবে? অবাক হলেও সত্য যে, বৃদ্ধাকে দাদি বলে ডেকে খাতির জমিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে সটকে পড়লেও যুবকের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেয়া দুরস্ত, বৃদ্ধার কান্না দেখেও তেমন কাউকেই সহানুভূতি প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরকমই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন পড়ে অবশ্য চুয়াডাঙ্গার একজন শিল্পপতি সহযোগিতার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, মাদক সহজলোভ্য হওয়ার কারণে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদকের কালোথাবা পড়েছে। শুধু উঠতি বয়সীই নয়, বহু পেশাজীবীও মারণনেশা তথা ড্রাগজাতীয় নেশার কবলে পড়ে বিপথগামী হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর প্রহর গুণছে অনেকে। নেশাখোরদের উৎপাতে সমাজে শান্তিও বহুলাংশে বিনষ্ট হচ্ছে। ছিঁচকে চুরিও বেড়েছে। মাদকের কারণে অশান্তির আগুন জ্বলছে বহু সংসারে। পথে ঘাটে নেশাখোরদের উৎপাত তো আছেই। ভালো ভালো পরিবারের বহু ছেলে নেশাগ্রস্ত হয়ে পথের ভিখেরি হয়েছে। এরা পথচারীর কাছে হাত পাততে লজ্জিতবোধেরও বিবেক হারিয়েছে। তাদেরই কেউ হয়তো আলমডাঙ্গা বেলগাছির বৃদ্ধার নিকট থেকে বৃদ্ধাভাতা’র ১২শ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকেছে। আবার সমাজের যে ছবি দিন দিন ফুটে উঠছে তা অবলোকনে নৈতিকতা স্খলনের বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিছু সঙ্ঘবদ্ধ উঠতি বয়সীর উগ্র আচরণ যেভাবে বহির্প্রকাশ ঘটছে তা দেখেও নীতি-নৈতিকতা কতোটা তলানির দিকে যাচ্ছে তা নিয়েও ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বটে।
চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীর আবার নৈতিকতা কী? এ প্রশ্ন যুক্তির দাবি রাখলেও তা জিইয়ে রেখে সমাজের শান্তি কামনা করা যায় না। সমাজের যেকোনো সমস্যাই যেহেতু সমাজের সকলের সমস্যা, সেহেতু সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার দাবি রাখে। এক বৃদ্ধার নিকট থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে বিবেকবর্জিত যুবকের পলায়নের দায় সমাজের দায়ত্বশীলেরা এড়াবেন কীভাবে? পুলিশ? পুলিশও পারে বটে। কখন পারে, কখন পারে না বিবেচ্য বিষয় বটে। এরপরও পুলিশকে পারতে হবে, সমাজের দায়িত্বশীলদেরও এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সমাজকে সুন্দর করার দায় অবশ্যই সকলের।