নৈতিকতার স্খলন জাতির জন্য আত্মঘাতী

 

শিক্ষক যখন ছাত্রী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হন, ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক যখন সাময়িক বরখাস্ত হন তখন কিছু প্রশ্ন দানা বাধে। সত্যিই কি সমাজ সঠিক পথেই এগোচ্ছে? পক্ষে-বিপক্ষে যতো যুক্তিই থাক, শিক্ষকের নিরাপত্তা এবং তাদের নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে না পারলে অগ্রযাত্রার পথকে খাদমুক্ত বলা যাবে না। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে সমাজের আদর্শ তথা মানুষ গড়ার কারিগরদের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাজের দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা জাতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে।

 

গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত পৃথক দুটি প্রতিবেদনের একটিতে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ মহেশপুরের দত্তনগর এসএম ফার্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এক বখাটের চাচাতো ভাই বাটাম দিয়ে মেরে রক্তাক্ত জখম করেছে। কেন? বখাটে বিদ্যালয়ে ও বিদ্যালয়ের পথে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে বারণ করেছিলেন প্রধান শিক্ষক। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরকমই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রেণিকক্ষে এবং প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক শিক্ষক ছাত্রীদের নানাভাবে শ্লীলতাহানি করতেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

 

দুজনই শিক্ষক। একজন অন্যায় পথ থেকে সুধরাতে বখাটেকে কিছুটা বকাঝকা করে হামলার শিকার হয়েছেন, অপরজন নিজেই অন্যায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়েরই শুধু নয়, রাস্তাঘাটে যেখানেই কোনো উঠতি বয়সীরা অন্যায় করবে সেখানেই বয়সীরা সুধরে নেয়ার জন্য শাসনের অধিকার রাখেন। সমাজই এ অধিকার দিয়েছে। তাহলে সমাজ শিক্ষকের নিরাপত্তা দিতে পারছে না কেন? সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন। বখাটে অবশ্যই কারো না কারো সন্তান। তাকে সুপথে রাখা, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য অভিভাবকের দায়িত্ব অনেক। মূলত সে কারণেই প্রতিটি পরিবারকেই শিশুদের মূল শিক্ষালয় বলা হয়। পরিবারে সুশিক্ষার অভাব থাকলে শিক্ষক যেমন শ্রদ্ধেয় হন না, তেমনই শিক্ষকও সেই অধিকার অর্জনের মতো দক্ষ না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ। আর শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি? অভিযুক্ত শিক্ষক আত্মপক্ষ সমর্থনে নিশ্চয় অস্বীকার করবেন। এরপরও তিনি কি জোর করে বলতে পারবেন যে, স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় ভুল করেননি? করেছেন। যে শিক্ষক স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে চলতে পারেন না, তার শিক্ষকতার সুযোগ কে দিয়েছে?

 

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। পড়ুয়াদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অভিভাবকদের যদি দুশ্চিন্তার প্রহর গুনতে হয়, তাহলে জাতি শিক্ষিত হবে কীভাবে? যদিও সকল শিক্ষকেরই আচরণ এক রকম নয়। কিছু আছেন, যাদের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থাটা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধ্যে পড়তে হচ্ছে প্রতিভাবান দায়িত্বশীল শিক্ষকদেরও। এ চিত্র শুধু প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়েও। এরপরও কীভাবে দাবি করবো যে, আমরা সভ্য? শিক্ষকদের এহেন আচরণ শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে। নৈতিকতার স্খলন জাতির জন্য আত্মঘাতী। আর শিক্ষকদের নিরাপত্তা? এ দায়িত্ব অভিভাবকের, সমাজের।