নেপথ্যে কূটচাল থাকার আশঙ্কাও রয়ে যায়

বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে মিয়ানমার যেভাবে ভারী সামরিক উপকরণসহ সেনা মোতায়েন করেছে, তা উস্কানি ছাড়া আর কী হতে পারে? বিজিবির ঘুমঘুম সীমান্ত চৌকিতে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে তারা যদিও দাবি করছে যে, ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা’র জন্যই কেবল সেনা মোতায়েন, তা বিশ্বাস করা কঠিন। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির পক্ষে রীতিমতো মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের ‘ধাওয়া বাঙালি’ আখ্যা দিয়ে শূন্যরেখা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিলোবলা হয়েছিলো অন্যথায় ‘কোনো কিছুর জন্য’ মিয়ানমার দায়ী থাকবে না। রাখাইন থেকে সব হারিয়ে কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া যখন দৃশ্যত এগিয়ে চলছে, তখন এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল হঠকারী হতে পারে না, নেপথ্যে কূটচাল থাকার আশঙ্কাও রয়ে যায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি সরানোর কৌশল হিসেবেই তারা সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। নিরাপত্তা বিশ্নেষক এয়ার কমডোর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী এতে আতঙ্কিত না হওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাও প্রণিধানযোগ্য। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শান্ত থেকেই সমুচিত জবাব দেয়া উচিত। মিয়ানমার এই প্রথম যে এমন উস্কানি দিয়েছে, তা নয়। আগেও বিভিন্ন সময়ে দেশটির অবিমৃষ্যকারিতা দেখেছি আমরা।

এসব ক্ষেত্রে পাল্টা পদক্ষেপ অনেক সময় সুফল দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রয়োজনে সীমান্তে শক্তি প্রদর্শনের কথাও ভাবা যেতে পারে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়নের পর থেকে দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে চরম চাপের মধ্যে রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতেও দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা ও চুক্তির মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হয়ে বাংলাদেশ বরং সৎ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু কয়লা ধুলে যে ময়লা যায় না, সীমান্তে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো তা আরেকবার প্রমাণ করলো। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ঢাকা ও নেপিডোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিটি হয়েছিলো মূলত বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায়। এখন তাদেরও জানিয়ে দেয়া যেতে পারে যে, মিয়ানমার সেই চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকছে না। তাদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে হবে, এ ধরনের পদক্ষেপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুষ্ঠু প্রত্যাবর্তন ছাড়াও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সহাবস্থানের অন্তরায়। এও জানিয়ে দিতে হবে, বাংলাদেশ ধৈর্য ধরে আসছে। কিন্তু ধৈর্যেরও একটি সীমারেখা রয়েছে। নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশ বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না।