নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে দেশবাসী। ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঢাকার দুই সিটির এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এটি বিশেষ এক মর্যাদার লড়াই। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলই প্রার্থী দিয়েছে। ফলে আশা করা যায় নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা ইসির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি বেশকিছু স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু তারা ভোটাধিকার রক্ষার বিষয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। এ অবস্থায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তাদের আস্থা পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ তৈরি করেছে বলা যেতে পারে। তারা এ সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাবেন, এটাই মানুষ দেখতে চায়। ইসির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা। তা না হলে ভোটকেন্দ্রে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাবে না। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে ইসিকে।
লক্ষ্য করা গেছে, নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরবর্তী সময়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও হুমকির অভিযোগও উঠেছে। বস্তুত নির্বাচনী প্রচারণা নির্বাচন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা দরকার। ইভিএম নিয়ে ইসির সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা হয়নি। এ ব্যাপারে তাদের সংশয়মুক্ত করা যায়নি। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া মানেই গ্রহণযোগ্য হওয়া নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইসি যদি এ থেকে উত্তরণ চায়, তাহলে তাদের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ঢাকা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এর প্রমাণ দিতে হবে। দায়িত্ব রয়েছে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদেরও। নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য ভোটকেন্দ্রে প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ করতে হবে। শুধু তাই নয়, ভোট গণনা না হওয়া পর্যন্ত সেখানে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ বেশিরভাগ স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীরা এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেননি। কোথাও এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে, কোথাওবা কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এবার তেমন ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ইসির জন্য আস্থা ফেরানোর একটি বড় সুযোগ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। আর সে জন্য এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নির্বাচনের সব পক্ষই আশ্বস্ত হতে পারে যে, নির্বাচনটি সুষ্ঠু হতে যাচ্ছে। ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রেও বজায় রাখতে হবে শতভাগ স্বচ্ছতা। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছি।