নির্বাচনকালীন সরকার

জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন চলছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ অধিবেশন চলবে আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত। অধিবেশন শুরুর দিন প্রধান বিরোধী দল সংসদে যায়নি। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা সরকারের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের মতে, সরকারি দলকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের বিল আনতে হবে। তারা এ ব্যাপারে সংসদে কোনো প্রস্তাব দেবেন না। আর এ জন্য সরকার চাইলে বিরোধী দল আলোচনায় বসতে রাজি আছে। কিন্তু সরকারি দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আলোচনার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়নি। তারা বলছে, সংসদ অধিবেশনেই এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বিরোধী দলের বক্তব্য, অধিবেশনে কেবল বিতর্কই হতে পারে, সেখানে আলোচনা সম্ভব নয়। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে এখনো উভয়পক্ষ কৌশলগত অবস্থানেই রয়ে গেছে।

 

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ঘোষণা দিয়েছে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। মহাজোটের সাথে থাকা জাতীয় পার্টিও বলেছে, বিএনপি নির্বাচনে না এলে তারাও নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে যদি কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেটি কোনোমতেই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের ধারণা, সরকারও চাইবে না এ ধরনের একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে, যাকে মানুষ নির্বাচনের নামে প্রহসন হিসেবে গণ্য করতে পারে।

 

বিএনপি বলেছে, তারা সামনের ঈদ পর্যন্ত দেখবে। এর মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো ফয়সালা না হলে তারা দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করবে। হরতাল, রাজপথ ও রেলপথ অবরোধসহ সব ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে। আর তাতে কার্যত সারাদেশ অচল হয়ে পড়বে। শুরু হবে সংঘাতের রাজনীতি। তৈরি হবে চূড়ান্ত ধরনের অস্থিতিশীলতা। আর এর ভুক্তভোগী হবে দেশের সাধারণ মানুষ, দেশের অর্থনীতি।

 

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য আর চার মাসের মতো সময় বাকি আছে। এর মধ্যে সব দলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। জরুরি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে। দলগুলোকে প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু এখনো যদি নির্বাচন নিয়েই অনিশ্চয়তা থেকে যায়, তাহলে বাকি সব নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে কীভাবে? আমরা মনে করি, সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়কেই আরো আন্তরিক হতে হবে। কেবল পরস্পরের কাঁধে দায় চাপানোর পুরোনো কৌশল ত্যাগ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যমান সঙ্কটের সমাধান করতে হবে এবং তা করতে হবে সংসদের চলতি অধিবেশনেই। আমরা চাই, দেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকুক। আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।