নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা আমাদের সবার

মহাসড়কে আবার ঝরে গেল ২৫ মূল্যবান প্রাণ। গভীর রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে যাত্রীবাহী একটি বাস রাস্তার পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই ২২ যাত্রীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মারা যায় আরো তিনজন। দুর্ঘটনায় নিহতদের দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসাব্যয়ও জেলা প্রশাসন বহন করবে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন। একটি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালক এ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া চালকের আসনে বসে যাওয়ার ঘটনা তো নৈমিত্তিক। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের ৬১ শতাংশ চালক পরীক্ষা না দিয়ে লাইসেন্স নিচ্ছেন। ১৬ লাখ চালক বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রশিক্ষণবিহীন অবৈধ চালকদের পাশাপাশি রয়েছে চলাচলের অনুপযোগী লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। ফিটনেসবিহীন কতো যানবাহন যে দেশের সড়কপথে চলাচল করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানে না। তবে এসব গাড়ি কিভাবে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করে তা যেমন দেশের মানুষের জানা, তেমনি বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই চালকের আসনে বসে বছরের পর বছর যানবাহন কেমন করে চালানো যায়, তা-ও কারো অজানা নয়।

আশির দশকে এ দেশে একটি আইন হয়েছিলো। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য চালকের অপরাধ প্রমাণিত হলে তার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সে আইনটি বাতিল করতে হয়। সেই থেকে আজ অবধি আর কোনো কঠিন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ কোনো সরকারই নেয়নি। অদ্ভুত এ দেশে গাড়ি চালাতে না জানলেও এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। ভুয়া লাইসেন্স নিয়েও এখানে গাড়ি চালানো যায়। ধরা পড়লে কিছু টাকা দিলেই সব কিছু ম্যানেজ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, একজন চালক ১০টি হত্যা করলেও তা হয় জামিনযোগ্য অপরাধ। সাধারণভাবে তাঁদের কোনো শাস্তিই হয় না। কদাচিৎ বিচারের মুখোমুখি হলেও এ ধরনের অপরাধের শাস্তি ক্ষেত্রবিশেষে তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। এমন কোনো দিন নেই যেদিন দেশের কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে না। প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান জীবন। অনেক পরিবার হারাচ্ছে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অনেককে সারা জীবনের মতো পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

ফরিদপুরের বাস দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটেছে তা অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সব সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা আমাদের সবার। কিন্তু সে প্রত্যাশা কবে পূরণ হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না।