নিজেদের ভালো-মন্দটা না বুঝে খুঁিজ শুধু নিজেরটা

গাড়ির সংখ্যা বাড়লেই যে দুর্ঘটনা বাড়ে না তা আন্তর্জাতিক জরিপ প্রতিবেদনই ষ্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির ঘরে ঘরে বললেও বোধকরি ভুল হবে, জনে জনে গাড়ি। অথচ সেখানে দুর্ঘটনার সংখ্যা বিশ্বের অন্য সকল দেখের তুলনায় কম। কেন? যেসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটে সেসব কারণগুলো যথাযথভাবে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হয়েছে তারা। আর আমরা? অক্ষমতা পদে পদে। ফলে সড়ক হয়েছে মৃত্যুপুরি। গতকালও চুয়াডাঙ্গায় দুর্ঘটনায় একজন জনপ্রতিনিধি প্রাণ হারিয়েছেন। আজ ক’জনকে সড়কে বের হয়ে মারতে হবে কে জানে?
দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানোর যুগ গত হয়েছে বহু আগে। দুর্ঘটনা নানা কারণে ঘটে। কারণগুলোর মধ্যে যেগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ্য তা হলো- ট্রাফিক আইন মেনে না চলা বা মেনে চলতে বাধ্য করতে না পারা, গাড়ি সড়কে চলাচলের উপযোগিতা নির্ণয়ে নিদারুণ দুর্নীতি, অবৈধযানের ছড়াছড়ি। ভারি গাড়ির চালক সনদ পরীক্ষা নেয়ার বদলে তাদের সংগঠনের সুপারিশের গুরুত্ব দেয়া। অদক্ষ চালক, অসচেতন পথচারী এবং অনুপযোগী সড়ক। এতোসব কারণে যখন বিদ্যমান তখন দুর্ঘটনার সংখ্যা বিশ্বের সর্বাধিক হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? নিশ্চয়। সেটাই হয়েছে। নিজেদের কারণে নিজেরা মরছি আবার বিশ্ববাসীর সামনেও হারাচ্ছি নিজেদের মর্যাদা।
গতকাল শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজের অদূরে ইটবহন করা ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য। তিনি ইটবহন করা ওই ট্রাক্টর অতিক্রম করতে গেলে সড়কের পাশের অসম খাদে পড়ে কাত হয়ে ট্রাক্টরের চাকার নিচে পড়ে পিষ্ট হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এরকমই তথ্য দিয়েছেন। সে হিসেবে এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মূলত সড়ক। অবশ্য মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারার আড়ালে জনপ্রতিনিধির সুস্থতার প্রসঙ্গটাও আলোচনায় উঠেছে। সেটাও প্রাসঙ্গিক বটে। কেন গতি ছিলো বেপরোয়া? এটাও তো আইন প্রয়োগকারীদের দেখার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
সড়ক নিরাপদ করতে হলে দুর্ঘটনার সকল কারণগুলো শনাক্ত করে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়ক উপযোগী নয় অথচ উচ্চগতির মোটরসাইকেল বাজারে সয়লাব। এসব আমদানি কার স্বার্থে? রাষ্ট্রপরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিতদের দায়িত্বপালনে সততার সাথে আন্তরিক হতে হবে, হতে হবে দূরদর্শী। কি করলে কী হয় তা যে বা যারা বোঝে না তাদেরকেই তো নির্বোধ বলা হয়। আমরা কারা, যারা নিজেদের ভালো-মন্দটা না বুঝে শুধু খুঁিজ নিজেরটা? সড়ক নিরাপদ করতে দরকার নানামুখি উদ্যোগ, সম্মিলিত প্রচেষ্টা।