নারী ও শিশু পাচার রোধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

 

ভারতের বিভিন্ন কারাগারে ও আবাসিক হোমে ঠিক কতোজন বাংলাদেশি নারী বন্দি রয়েছে তার স্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই। চরম অনিশ্চয়তার বন্দিদশা থেকে কিছু মানবাধিকার সংগঠনের বিশেষ তৎপরতায় হাতেগোনা নারী ও শিশুকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। এরা কারা? অধিকাংশই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের সদস্য। মোটা অংকের বেতনের প্রলোভনে পাচার হয়ে ভারতে ধরা পড়া। যারা ভারতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে না তাদের ভোগ করতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। নির্যাতন। এরপরও নারী ও শিশু পাচার কি বন্ধ হয়েছে?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নারী ওশিশুকল্যাণ দফতরের ওই হোম থেকে জানলার গ্রিল ভেঙে ২৫ জন বাংলাদেশি নারীপালিয়ে আত্মগোপন করে। গত সোমবার এ ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে দুজনের হদিস মেলেনি। বাকিদের যখন ওই হোমে ফিরিয়ে নেয়া হয় তখন তারা বিক্ষোভ করে। তাদের বিক্ষোভের সাথে হোমের অন্যরাও অংশ নেয়। তাদের দাবি, কারাগারে দাও, নির্যাতন আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগা এই নরকে রেখো না। এ দাবির মধ্যদিয়েই স্পষ্ট, তারা কেমন আছে, কেমন থাকে। বেশ কয়েক মাস আগে এই হোমেরই এক অস্থায়ী শিক্ষক অশোক কুমার দাসকেশ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মাঝেমধ্যেই হোম থেকে আবাসিকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সরকারি আবাসিক হোমেই যখন কষ্টের শেষ নেই, তখন পাচার হওয়া নারীদের কোথায় কেমন দশার মধ্যে থাকতে হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু চরম এই বাস্তবতা কি দরিদ্র পরিবারের নারীরা জানেন? জানলে নিশ্চয় তারা নারী ও শিশু পাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে পাচার হতো না। অবশ্য শুধু পাচারের পরিণাম বলে পাচারকারীদের প্রলোভন থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। পাচার রোধে দরকার দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বস্তরে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তোলা।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, হোম থেকে পালানো ২৫ জন আবাসিকের মধ্যে ১৩ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সমাজ কল্যাণমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাকিদেরও দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। শুধু মানবাধিকার সংস্থা সমূহের বিশেষ উদ্যোগ নয়, প্রতিবেশী দু দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের দ্রুত দেশে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। একই সাথে প্রয়োজন নারী ও শিশু পাচার রোধে আরো তৎপরতা।