দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. এ কে এম শফিউল ইসলামকে শনিবার বিকেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে গত ৩৫ বছরে রাবিতে ৩৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে। অন্যদিকে শনিবারের এ হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এক রহস্যময় পেজ খুলে হত্যার দায় নিয়েছে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামে একটি সংগঠন। ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে’ এ মুরতাদ আজ উচিত শিক্ষা পেয়েছে’। এ হত্যাকাণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভঙ্গুর অবস্থানে পৌঁছেছে, তেমনটি মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ অবস্থার ভেতর দিয়ে একটি রাষ্ট্রে কখনো শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসতে পারে না। তাই এ দুরবস্থা থেকে উত্তরণই কাঙ্ক্ষিত।

তথ্য মতে সর্বশেষ ৮ বছর আগে ২০০৬ সালে ক্যাম্পাসে নিজ বাসায় খুন হয়েছিলেন ভূতাত্তি্বক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম তাহের। এর আগে ২০০৪ সালে খুন হয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনুস। এবার খুন হলেন শফিউল ইসলাম। আমরা মনে করি রাবিতে খুনের ঘটনাগুলো কিছুতেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রাবিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের লাশ পড়ে, রক্ত ঝরে। মামলা হয়, তদন্তও হয়। কিন্তু কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শেষ হয় না। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে মামলাগুলো। এ পর্যন্ত মাত্র দুটি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। এ বিষয়গুলো কিছুতেই ইতিবাচক বলে ভাবার কোনো সুযোগ থাকে না। অপরাধীর যদি বিচার না হয় তাহলে সঙ্গত কারণে অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ধারণা এমনটিই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা যেমন লক্ষণীয় তেমনি, অনেক অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে গেছে এমনটি দৃষ্টান্ত হয়তো পাওয়া যাবে। এসব ঘটনা একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য নেতিবাচকতারই জন্ম দেয়। ফলে এ অবস্থার নিরসন হওয়া জরুরি। রাবির শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবরোধ ও ক্লাস বর্জনসহ দায়ীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। রাবি হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশও বেশ তৎপর রয়েছে। রক্তমাখা চাপাতি ও মোটরসাইকেল উদ্ধারের পর এ হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল রাজশাহী ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ূন আহমেদকে আটক করেছে পুলিশ। আমরা মনে করি, সাম্প্রতিক এ হত্যাকাণ্ডসহ ইতঃপূর্বে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া জরুরি। তা না হলে দেশের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকার কিছুতেই এড়াতে পারবে না। অনস্বীকার্য যে, দেশে প্রকৃত অর্থে আইনের শাসন থাকলে, অপরাধীদের সাজা হলে খুন-খারাবির ব্যাপকতা কমে আসত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত কয়েক বছর ধরে দেশে একের পর এক খুন, গুম, অপহরণ ঘটে চলেছে, অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী এসব অপরাধের বেশিরভাগেরই কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি। ফলে অপরাধীদের মনে এ ধরনের ঘটনা সংঘটনে কোনোরকম ভীতি কাজ করছে না। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তে গতি না থাকায় অপরাধীরা ওই ধরনের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অপরাধদমন বিভাগের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এদিকে নজর দেয়া। যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় না আনা গেলে দেশে অপরাধপ্রবণতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এ পরিস্থিতি সরকার বা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হতে পারে না।

আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে সরকার সচেতন না হলে এবং আরো কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির উত্তরণ আশা করা যায় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নেই বলেই একের পর এক তারা ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ এ ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে সরকারকে। আমরা মনে করি, দেশে ঘটে যাওয়া সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।