দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের দশা এবং পদস্থ কর্তাদের চিকিৎসা

 

শুধু চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে নয়, সারাদেশেই স্বাস্থ্য বিভাগে শৃঙ্খলার বড্ড অভাব। খালি ক্যাপসুলের মধ্যে আটা-লবণ ভরে যেমন প্রতারণার প্রমাণ মিলছে তেমনই ব্যাঙের ছাতার মতো গজে ওঠা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোমে অপচিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াগনস্টিকে? চিত্রটা আরো ভয়াবহ। কেন? সরকারি হাসপাতালে চাহিদা মতো স্বাস্থ্যসেবায় ঘাটতির সুযোগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য প্রশাসনের উদাসীনতা পরিস্থিতি বেসামাল করে তুলেছে। চিকিৎসা নিতে গিয়ে সরলসোজা মানুষগুলো শুধু হয়রানি বা প্রতারিতই হচ্ছেন না, অনেকে প্রাণও হারাচ্ছেন। অপচিকিৎসায় কতোটা প্রাণ ঝরলে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কুম্ভঘুম ভাঙবে? লা জবাব।

 

জাতি কতোটা সুস্থ, তা নির্ভর করে তার স্বাস্থ্যবিভাগের শৃঙ্খলার ওপর। মুদি দোকানে ওষুধ বিক্রি তো হচ্ছেই, হাতুড়ে ডাক্তারও হরহামেশাই দিচ্ছে এন্টিবায়োটিকের মতো ওষুধ। অনুমোদিত ফার্মেসিগুলোতে? রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের দরকার নেই। ওষুধের নাম বললেই যেমন ওষুধ কেনা যায়, তেমনই রোগের বর্ণনা দিলেও দোকানি বা তার কর্মচারী চিকিৎসক সেজে ওষুধ দিচ্ছেন। এ দৃশ্য শুধু গ্রামে নয়, শহর উপশহরের প্রায় প্রতিটি ওষুধের দোকানের। এতে ক্ষতি? রোগ শরীরে স্থায়ীভাবে বাসা বাধছে। জাতির ঘাড়ে চাপছে চিকিৎসার বাড়তি চাপ। খালি ক্যাপসুলের মধ্যে লবণ-আটা ভরে নামিদামি কোম্পানির নামে মোড়ক ছেপে তাতে ভরে বিক্রি করে অসাধু ব্যক্তি রাতারাতি বনে যাচ্ছে কোটিপতি। বৈধ ওষুধ কোম্পানির ওষুধের দামও রাতারাতি বেড়ে যাচ্ছে। কিছু চিকিৎসক রয়েছেন যারা উপঢৌকনে খুশি হয়ে ওসব কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ রোগীদের কিনতে কৌশলে বাধ্য করছেন। শুধু কি তাই? রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের নিকট গেলেই ডায়াগনসিসের পর ডায়াগনসিস। অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ কমিশনের কারণে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করতে বাধ্য করা হয় রোগীদের। ডায়াগনস্টিকগুলোতে ডায়াগনসিসের নামে কি হচ্ছে? গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এর সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, তিনটি প্যাথলজিতে তিনরকম রিপোর্ট, কোনটি সঠিক? এই যখন অবস্থা, তখন রোগীদের অধিকাংশই ওষুধের দোকানে গিয়ে দোকানি তথা ফার্মাসিস্টের নিকট থেকে ওষুধ নিয়েই সাময়িক সুস্থ হয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোমে? বিশেজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই দেদারছে চলছে অস্ত্রোপচার। অনেক সময় ক্লিনিক মালিক, ঝাড়ুদার ও আয়ারাই সেজে বসছেন কনসালটেন্ট। চিকিৎসা দিতে গিয়ে হত্যা করছেন মানুষ। স্বাস্থ্য প্রশাসনের এই যখন হাল, তখন দেশের মানুষ কতোটা সুস্থ তা সহজেই অনুমান করা যায়। সরকারি হাসপাতাল? সেখানে চিকিৎসার নিশ্চয়তা থাকলে নিশ্চয় বেসরকারি ওইসব চিকিৎসাকেন্দ্রে ভিড় জমিয়ে রোগী সাধারণকে প্রতারিত হতে হতো না!

 

দেশের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকেই মাঝে মাঝে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান। কেউ কেউ তো স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য বিদেশ গমনের খবর খানেকটা ফলাও করেই প্রকাশ করতে আগ্রহী। অর্থশালীরা? দেশে চিকিৎসার কথা শুনলেই তাদের সিংগভাগই দেশে চিকিৎসা নেয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে খানেকটা নাক সিটকে বলেন, কীভাবে আস্থা রাখবো? দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের চিকিৎসা বিদেশ নির্ভর তারা কি একবারও ভাবছেন দেশের সাধারণ মানুষের কথা? তা না ভাবলেও চিকিৎসা ব্যবস্থার ভবিষ্যত কোন পথে তাও কি ভাবনায় নূন্যতম ঠাঁই দিয়েছেন? দেশের প্রত্যেকের চিকিৎসাসেবা পাওয়া দয়া নয়, অধিকার। ভেবে দেখুন কর্তাবাবুরা।