দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী নির্বাচন

 

দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের রেকর্ড গড়েছে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। শনিবার ছিলো এ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ। এই ধাপে ৭২০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগ্রহণের আগেই ঝরে গিয়েছিলো আরো তিনটি প্রাণ। ভোটগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র দখল, ব্যালট ও ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম ছিনতাই, সংঘর্ষ, বোমাবাজি ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং প্রার্থীসহ অন্তত ১২ জন নিহত ও শতাধিক আহত  হয়েছে। বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিতও করা হয়েছে। অথচ নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও এই ধাপে নির্বাচন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। এই তুলনামূলক ভালোর পরিমাপ কী? বরং তার এই সন্তুষ্টি অনেকের কাছেই এক নিদারুণ পরিহাস বলে মনে হয়েছে।

এ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিহতের সংখ্যা প্রায় ১শ। আহতের সংখ্যা এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে সহিংসতা অনেক বেশি হতে পারে এমন ধারণা আগে থেকেই গণমাধ্যমগুলো দিয়ে আসছিলো। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকেও এমনই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিলো। নির্বাচনকালে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তৃত্বে থাকে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় প্রশাসন যেকোনো ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকে। তার পরও নির্বাচন কমিশন কেন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ফলে হতাহতের এতো ঘটনা ঘটেছে। ভোট দিতে গিয়েও মানুষকে নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। অথচ প্রতিটি ধাপের নির্বাচনের পরই নির্বাচন কমিশন স্বস্তি প্রকাশ কিংবা তুলনামূলক ভালো হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটা কি খুব জরুরি ছিলো? এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়নে ও দলীয় প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, এ কারণেও সংঘাত বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর পক্ষ থেকে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বহু অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও তাদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিলো, নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলগুলোর অভিযোগগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়নি, সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। কোনো কোনো দল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগও তুলেছে। অথচ দেশের মানুষ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ভূমিকা প্রত্যাশা করে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কি জনগণের আস্থার সেই জায়গাটি ধরে রাখতে পেরেছে? এর উত্তর কমিশন নিজেই নিজেকে দিতে পারে।

তুলনামূলক বা অপেক্ষাকৃত ভালো নয়, সত্যিকার অর্থেই নির্বাচন ভালো হোক। নির্বাচন কমিশনকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত পাঁচটি ধাপে নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাকি ধাপগুলোতে নির্বাচন কমিশন আমাদের তেমন নির্বাচনই উপহার দেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকেও যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর আগের নির্বাচনে সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও সমর্থকদেরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ইউপি নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলো অবশ্যই সহিংসতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।