দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারীদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা

শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। দিনটি বড়ই শোকাবহ। বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে। চূড়ান্ত বিজয়ের উৎসব উদযাপনের ঠিক আগেই আমাদের সামনে আসে গভীর বেদনাভরা এই দিনটি। একাত্তরের এ দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছিলো এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের প্রাক্কালে দখলদার বাহিনী ও তার দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা হত্যা করে জাতির অনেক কৃতিসন্তানকে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধা ও মননে পঙ্গু করে দিতেই তারা এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তারা ভেবেছিলো, এতে স্বাধীনতা পেলেও আমাদের পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। এর আরেকটি বড় উদ্দেশ্য ছিলো স্বাধীনতা লাভ করতে যাওয়া একটি জাতিকে মেধাশূন্য করা। আজ আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির সেসব শ্রেষ্ঠ সন্তানকে।

২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরুর পর থেকেই তারা গণহত্যার পাশাপাশি বেছে বেছে কিছু মানুষকে হত্যা করে যারা বিবেচিত হতেন দেশের অসাধারণ নাগরিক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময়টায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে দেশীয় অনুচরদের সহায়তায় হত্যা করা হয় তাদের। তাদের অপরাধ ছিলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসাধারণকে স্বাধিকারের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলা এবং মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা জোগানো। প্রাণরক্ষা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে অনেক বুদ্ধিজীবী দেশত্যাগ করায় তারা রেহাই পান ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষত ডিসেম্বর মাসে আমরা যাদের হারিয়েছি, নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের অধিকাংশই ছিলেন খ্যাতিমান। যুদ্ধে চারদিক থেকে কোণঠাসা হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা ঢাকাসহ মূলত শহরাঞ্চলে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড চালায়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাঙালির বিজয় অর্জনের ফলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে এক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আমাদের জন্য তা ছিলো মহত্তম অর্জন। কিন্তু বিজয়ের আনন্দ অনেকটাই বিষাদে পরিণত হয় লাখ লাখ সাধারণ মানুষ ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের কারণে। এসব বুদ্ধিজীবীসহ ৩০ লাখ শহীদ ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় মাতৃভূমি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার কলঙ্ক ও দায় থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। প্রতিবারের মতো এবারও জাতি আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ওইসব মানুষকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত পথে হেঁটে যাক, এ প্রত্যাশাই এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে।