দু স্কুলছাত্রী বাড়িতে চিরকুট লিখে নিরুদ্দেশ এবং

বড় বেয়াড়া না হলে কি আর ওরা বাড়ি ছেড়ে ওভাবে পত্র লিখে পালায়? বাড়ির বড়রা এ ধরনের উক্তি আওড়ে মূলত নিজেদেরই দায়িত্বহীনতার দায় এড়ানোর চেষ্টা করবেন হয়তো। কিন্তু বাস্তবে আমাদের সমাজে এখনও যে মেয়ে শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় বড়দের মুখে ঘুরে ফিরেই লোকসানের কথাই শুনতে হয়! তা না হলে দু কিশোরী কেন ওইভাবে পত্রে কষ্টমাখা কথা লিখেবে? ওরা পত্রে লিখেছে, আমাদের পেছনে তোমাদের অনেক টাকা খরচ হয়, বড় করতে অনেক লোকসান হবে। তাই ভেবে-চিনতে বের হয়ে গেলাম। পারলে উপায় করে তথা আয় করে টাকা পাঠিয়ে তোমাদের সকল ঋণ শোধ করে দেবো।
অবশ্যই এ ধরনের কষ্টমাখা চিরকুট সমাজের সকল মেয়ের নয়। কোনো কোনো পরিবারের, কোনো কোনো মেয়ের। কেউ তার বহির্প্রকাশ ঘটায়, কেউ ঘটায় না। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গবরগড়া গ্রামের স্কুলের দু ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার নাম করে ওরা নিরুদ্দেশ হয়। সপ্তাহখানেক আগে নিরুদ্দেশ হওয়ার পর যখন খোঁজাখুজি শুরু হয়, তখন নিরুদ্দেশ দু ছাত্রীর মধ্যে একজন শারমীন খাতুন কষ্টমাখা চিরকুট লিখে রেখে গেছে। তাতে যা লিখেছে তা পড়ে বোদ্ধাদের অনেকেরই অনুমান, ওদের কথায় কথায় বকা হতো, পরীক্ষায় পাস না করলে বড় ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া ওদের খাওয়াতে পরাতে খরচ হয় বলেও হয়তো খোটা দেয়া হতো। এসব কারণেই উঠতি বয়সী দু স্কুলছাত্রী নিরুদ্দেশ হয়েছে। ওরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে নিশ্চয় বুঝতে পারেনি সমাজের বাস্তবতা কতোটা কঠিন, কতোটা ভয়ানক। সম্ভববত পারিবিারিক, পারিপার্শ্বিক অতিশাসন ওদের এমন একদিকে ঠেলেছে যেখানে মানুষরুপী হায়েনারদল দাঁত, নখ উঁচিয়ে ওদেরই অপেক্ষায় থাকে।
দিন বদলানোর সাথে সাথে সমাজে নারীর গুরুত্ব বেড়েছে। কিছু পরিবারে যদিও এখনও পারিবারিকভাবে ছেলে সন্তানের মতো গুরুত্ব মেয়ে সন্তানদের দেয়া হয় না, বরঞ্চ অবজ্ঞার দৃষ্টিতেও দেখা হয়। যা একজন নারীর জন্য বড় মনের মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠা কঠিন। অবশ্য এসবের মধ্যদিয়েও অনেক নারী স্থাপন করে চলেছে দৃষ্টান্ত। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেউ কেউ আপ্রাপ্ত বয়সে ভুল করে বসে। চুয়াডাঙ্গা গবরগাড়ার দু স্কুলছাত্রী ভুল করেছে ঠিক, তবে ওদের ওই ভুলের সব দায়ভার ওদের নয়। অভিাবকদেরও। যতো দ্রুত ওদের ফেরানো সম্ভব, ততো দ্রুত ফেরানোই হবে ওদের জন্য কল্যাণ। এ থেকে অন্যদেরও শিক্ষা নিতে হবে।