দু যুগ পেরিয়ে পঁচিশে আজ দৈনিক মাথাভাঙ্গা

দৈনিক মাথাভাঙ্গার আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জন্মদিন। দু যুগ পেরিয়ে পঁচিশে পদার্পণের এই শুভক্ষণে সকলকে শুভেচ্ছা। অকৃত্রিম ভালোবাসায় মাথাভাঙ্গাকে যারা আগলে রেখেছেন তাদের আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাস। যদিও যেভাবে মেতে ওঠার কথা, সেভাবে সাজ সজ্জা নেই। থাকে কী করে? হামলার ক্ষত এখনও থকথকে। ক্ষতি পুশিয়ে কবে মুছবে কষ্ট, কে জানে! হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে কি উল্লাসে মেতে ওঠা যায়?

১৯৯১ সাল। ২৬ মার্চ প্রস্তাবিত সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ছাড়পত্র হাতে পাওয়ার পর একই বছরের ১০ জুন যাত্রা শুরু করে দৈনিক মাথাভাঙ্গা। সচেতনতার আলো ছড়িয়ে কুসংস্কার তাড়ানো, অনিয়ম দুর্নীতিবাজের মাথাভাঙ্গা আর নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানুষের কণ্ঠস্বর হওয়ার অঙ্গীকার শরীরে মেখে যে পরিবারের এগিয়ে চলা, সেই পরিবার কি শাসানি, রক্তচক্ষু, ঘেরাটোপ মুক্ত মসৃণ পথ আশা করতে পারে? অবান্তর। যে সমাজে পক্ষের না হলে প্রতিপক্ষের কাতারে ঠেলে দেয়া হয়, যে সমাজে ন্যায়পক্ষের যুদ্ধ মুখ লুকিয়ে কাঁদে, সেই সমাজে সূচনার অঙ্গীকারে অটল থাকা সত্যিই কঠিন। তবুও সাহসী, তবুও সংগ্রামী- শুধু পাঠককূলের ভালোবাসা আছে বলেই। অসংখ্য পাঠককে আজকের এই শুভক্ষণে অভিবাদন। কুর্নিশ সকল বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীর প্রতি।

অবশ্যই পঁচিশ বছর কম নয়। কতোটা পেরেছে, কতোটা করতে পারতো, কতোটা পারেনি। আর যাই হোক এ অঙ্ক মাথাভাঙ্গা পাঠকদের কাছে জটিল নয়। পারে, পারে না। কখন পারে কখন পারে না তাও বিচক্ষণ পাঠকদের আর অজানা নয়। তবে সমাজের যেখানেই কুসংস্কারের অন্ধকারকে পুঁজি করে পাতা হয়েছে প্রতারণার দোকান, সেখানেই সচেতনতার আলোকরশ্মি ছড়াতে সহায়ক হয়েছে মাথাভাঙ্গা পরিবার। অনিয়ম-দুর্নীতি? যেহেতু রাস্তার পাশে জমে থাকা স্তুপ নয়, সেহেতু নিয়মের বাতাস ছড়িয়ে সংক্রমিত মানসিকতা পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় কমতি নেই। নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানুষের কণ্ঠস্বর? ন্যায়পক্ষে যুদ্ধ তো তারই নামান্তর! এ যুদ্ধ চলছে, চলবে। সন্ত্রাস দমনে মাথাভাঙ্গার শানিত কলম ওদের চকচকে আগ্নেয়াস্ত্রের নল বা রক্তচক্ষুর শাসানিতে থামাতে পারেনি। সম্প্রীতি প্রত্যাশী বলেই ধর্মকে পুঁজি করে হিংসা ছড়ানো, অপব্যাখ্যায় বিপথগামিতা রোধেও মাথাভাঙ্গা পরিবার সোচ্চার।

দৈনিক মাথাভাঙ্গা আঞ্চলিক সংবাদপত্রই নয়, তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপি। ছাপাখানা থেকে শহীদ হাসান চত্বর, কিংবা হোটেলবাজার বা পায়রা চত্বরে পৌছুনোর সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ে টরেন্ট, আমাস্টাডাম, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বিশ্বের সবখানে। এ যেন হেঁশেল থেকে হলিউডের যোগসূত্র। বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের সাথে নাড়িপোতা মাটির বন্ধন। দৈনিক মাথাভাঙ্গা যেমন চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহের প্রথম দৈনিক, তেমনই ২০০৭ সালে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে বিভাগ পেরিয়ে রাজধানীকেও টক্কর দেয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এতো সব সফলতার মধ্যে অনেককে অনেক কিছু হারানোর যন্ত্রণার ক্ষতও দগদগে হয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনু ও তার সহধর্মিনীকে হারাতে হয়েছে। অগ্রযাত্রায় এ দম্পতির অবদান কি ভুলতে পারে। আর সে জন্যই তো প্রধান সম্পাদক পদটি সাইফুল ইসলাম পিনুর জন্যই বরাদ্দ। সদরুল নিপুল, হাফিজ উদ্দীন, সাইদুল্লাহ আল সাহেদসহ বেশ কয়েকজন সহকর্মীকে হারাতে হয়েছে আমাদের। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা মাথাভাঙ্গা পরিবারের নৈতিকতারই অংশ।

প্রতিদিন প্রাতে পাঠকের হাতে মাথাভাঙ্গা তুলে দেয়ার আড়ালে থাকে বহু শ্রম। বহু অদম্য মেধার সম্মিলিত প্রয়াস। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবার যেহেতু মনে করে প্রতিদিনই পাঠকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, সেহেতু প্রতিদিনের প্রস্তুতিটাও থাকে নিজেদের চেষ্টার সবটুকু উজাড় করে দেয়ার। এরপরও ত্রুটি? অতো আয়োজনে যতোটুকুই ভুল ধরা পড়ে বা কেউ তা ধরিয়ে দেন, তা স্বীকার করে দ্রুত সুধরে নেয়ার সৎসাহস মাথাভাঙ্গা পরিবার সব সময় লালন করে। সে কারণেই পাঠককূলের মতামত পরামর্শ মাথাভাঙ্গা পরিবারের কাছে শিরধার্য। শব্দ চয়নে সাবলীলতা, উপস্থাপনে ছন্দের ছোঁয়া, তথ্য উপাত্তে বস্তুনিষ্ঠতায় শুধু প্রতিশ্রুতিবদ্ধই নয়, মাথাভাঙ্গা পরিবার পরতে পরতে উগ্রতা এড়িয়ে গ্রহণযোগ্য আধুনিক থাকতে চায়। গড়ে তুলতে চায় ভ্রাতৃত্ববোধ, ভরিয়ে তুলতে চায় উন্নয়নে। এতো কিছু মেনে যে যোদ্ধারা মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করছে, তাদের উৎসাহের জোগানদাতা সাধারণ পাঠকরাই।

দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রতিষ্ঠায় পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ অবদান অনেকের। চলার পথে সহযোগীর নামের তালিকাও বেশ লম্বা। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে অবশ্যই মাথাভাঙ্গা আজ ইতিহাস। সংশ্লিষ্ট সকলে তার অংশ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভদিনে সকল কষ্ট ভুলে আগামীকে সুন্দর করার প্রত্যয়ে আবারও সকলকে শুভেচ্ছা। প্রত্যেকের হৃদয়ে হৃদয় ঘঁষে প্রস্ফুটিত হোক ভালোবাসা। গড়ে উঠুক স্বপ্নের সোনার বাংলা।