দুর্নীতি কি দূর হবে? চৌহদ্দি ঘিরে হতাশার দীর্ঘশ্বাস

চুরির পথে পা বাড়ানোর জন্য শুধু অভাব নয়, স্বভাব ও মাদক বহুলাংশে দায়ী। এছাড়া বিলাসিতার অসুস্থ প্রতিযোগিতা দুর্নীতি তথা দায়িত্বশীলদের চোর্যবৃত্তিতে আকৃষ্ট করছে। যা সংক্রমিত হচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। নীতি নৈতিকতা সমাজ থেকে যেন দ্রুত উবে যাচ্ছে। প্রতিকার হবে কীভাবে? প্রশ্নটি সহজ, উত্তরও জানা। কিন্তু সমাধান মিলবে না। চরম এক বাস্তবতায় আমরা। দুর্নীতি নামক অক্টোপাস সুন্দর সমাজ গঠনের অন্যতম অন্তরায়।

 

শহর শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলে ছিচকে চোরের উপদ্রব লেগেই আছে। মাঠের সেচযন্ত্র শ্যালোইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ চুরির হিড়িক পড়ে, মাঝে মাঝে অবশ্য তাতে ভাটাও আসে। কৃষক সাধারণকে ভর মরসুম অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকতে হয়। গোয়াল থেকে গরু চুরি করে ট্রাকে তুলে সটকানোরও বহু উদাহরণ এ চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে। আবার মাদকপাচারকারীসহ চোরের থলেনদারের ট্রাকও রয়েছে বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের ফারুক তেমনই একজন। অবাক হলেও সত্য যে, মাঠ থেকে শ্যালোইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ চুরির পর চুয়াডাঙ্গা শহরের চিহ্নিত দোকান থেকে তা কিনতে গেলে নিজেরটা চিনেও চোরচক্রের চোখ রাঙানিতে প্রতিবাদ করার জো থাকে না। এসবের সাথে পুলিশের কি যোগাযোগ আছে? হয়তো আছে হয়তো বা না। পুলিশ কেন ওই চোরচক্রের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে না? পারে, ইতঃপূর্বে পেরেছেও। মামলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন ধরাও পড়েছে। বর্তমানে চুরি হলেও চোর তেমন একটা ধরা পড়ে না। মূলত এ কারণেই পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে সন্দেহের অবকাশ। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার প্রধান গেটের সামনের একটি জুয়েলারি দোকানের দেয়াল ভেঙে বা কেটে ঈদের দিনে অথবা রাতে দুঃসাহসিক চুরি হয়েছে। নৈশপ্রহরীসহ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুজনকে জেলহাজতেও প্রেরণ করা হয়েছে। চুরি হওয়া ৫০ ভরি ১০ আনা সোনার এক রতিও পুলিশ গত ৪ দিনে উদ্ধার করতে পারেনি। পারবে তো? বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে বিশ্বাস করা কঠিন। এ মন্তব্য স্থানীয় জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতির শীর্ষ নেতার। তিনি বলেছেন, পুলিশের তৎপরতায় আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। সরকারি-বেসরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অধিকাংশই বিলাসিতার অসুস্থ প্রতিযোগিতার কাছে নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছে। মুখোশধারী শাদা পোশাকধারী এ চোরের সাথে ছিচকে চোরের তফাৎ অবশ্য অনেক। ছিচকে চোর চিহ্নিত হচ্ছে, পোশাকধারী দুর্নীতিবাজ পুকুর চুরি করা কর্তা কেরানিরা তেমন চিহ্নিত হচ্ছে না। দুর্নীতির কারণেই দারিদ্র্য বিমোচন আজো অধরা, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন হয়ে আছে দুঃস্বপ্ন। চোর পাকড়াওয়ে সক্ষমতা ও অক্ষমতার আড়ালে?

 

গোলা-খোলা থেকে ধান-গম ভুট্টা চুরি রোধে যেমন দারিদ্র্য বিমোচন প্রয়োজন, তেমনই ছিচকে চুরি রোধে দরকার মাদকমুক্ত সমাজ। নেশার কবলে পড়ে অনেকে পেশা হারিয়ে পথের ভিখেরি বা চিহ্নিত চোর হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। দুর্নীতি তথা পুকুর চুরি করা সকল চোরের মুখোশ খুলে উচিত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অভাব ঘুচবে, স্বভাব শুধরে সুন্দর হবে সমাজের মানুষগুলো। দুর্নীতি কি দূর হবে? চৌহদ্দি ঘিরে হতাশার দীর্ঘশ্বাস।