দুর্ঘটনা এবং সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত রোহমর্ষক দৃশ্য

মোটরবাইক কারো কারোর জন্য বিলাসিতার বাইক হলেও অধিকাংশে ক্ষেত্রেই অত্যাবশকীয় বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বাইক ব্যবহারে বাড়তি সতর্কতায় সামান্য ঘাটতিতে জীবনটাই যে মুহূর্তের মধ্যে ঝরে যেতে পারে তা বলাই বাহুল্য। চুয়াডাঙ্গার তরুণ ব্যবসায়ী বাপ্পীর প্রাণহানির ভিডিওচিত্র তারই অন্যতম প্রমাণ। যদিও পুলিশের তত্ত্বাবধানে জেলা শহরে স্থাপিত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওচিত্র ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়ানোর নেপথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে ক্যামেরার ডিভিআর পুলিশ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে, সেই ক্যামেরার ছবি ভাইরাল হওয়াটাও কি নিরাপত্তাহীনতা নয়? দুর্ঘটনার ছবি অন্যের হস্তগত হয়েছে হোক। তবে মনে রাখতে হবে, নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যের ছবি ধারণ করা অন্যায় না হলেও সেই ছবি ছড়ানো নিশ্চয় অপরাধ।
সরকারের উন্নয়ন তালিকায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর নিচের দিকে থাকলেও আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্থানীয়দের সংগ্রাম অন্য এলাকার তুলনায় কোনো অংশে পিছিয়ে নয়। বরঞ্চ বহুলাংশে এগিয়ে। ধান, পাট, পান, ভুট্টাসহ খাটো আবাদ করে প্রান্তিকচাষিদের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর বৈপ্লবিক অগ্রযাত্রার জনপদে মোটরসাইকেল বা মোটরবাইকের সংখ্যা অন্য এলাকার চেয়ে বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতার মাঝে অস্বাভাবিক ব্যবহার বহুক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সড়ক যতোটা গতির মোটরবাইক চালানোর উপযোগী নয়, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গতির মোটরবাইক দেদারছে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে, তা চালাতে গিয়ে বিপন্ন হচ্ছে অনেকেরই জীবন। শুধু চালকের কারণেই নয়, সড়কের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। গত রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বরের অদূরে শহীদ আবুল কাশেম সড়কে প্রধান ডাকঘরের নিকট একটি ট্রাকের সামনে আছড়ে পড়া মোটরসাকেল আরোহী গুরুতর জখম হয়। তাকে হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হয় তার। মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ ব্যবসায়ী বাপ্পী শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ের ছেলে। দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধারণের পর তা ছড়িয়ে পড়ার পর কিছু প্রশ্ন সচেতনমহলে দানা বাঁধলেও দুর্ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হয়েছে। ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, একটি ট্রাক বড়বাজার এলাকা থেকে রেলবাজার অভিমুখে যাচ্ছে, দুটি মোটরবাইকের মধ্যে একটি বাইক অনেকটা দ্রুতগতিতে এসেই ট্রাকের সামনে গিয়ে কাত হয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রাকের ধাক্কায় লুটিয়ে পড়ে আরোহী। না, আরোহীর মাথায় হেলমেট ছিলো না। তাছাড়া অনেকেরই অভিমত-বাপ্পী মূলত ট্রাকের সামনে পড়েছে রাস্তা ভাঙার কারণে।
সড়ক নিরাপদ করার জন্য শুধু চালক-আরোহী-পথচারীদের ওপর আইন প্রয়োগ করলেই হয় না, সড়ক নিরাপদ করতে হলে সড়কও চলাচলের উপযোগী করতে হয়। চালকদেরও বাড়তি সতর্ক হওয়া জরুরি। তাছাড়া রেললাইনে যেমন বাস চালানো যায় না, তেমনই সড়কে রেলগাড়িও চলে না সেটা উপলব্ধি করেই মোটরযান আমদানির অনুমতি দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের কর্তব্যপালনে সবসময় কর্তব্যপরায়ণতার নজির তেমন মেলে না। সে কারণেই চোখ ঝলসানো আলোযুক্ত মোটরবাইক বা মোটরযান আমদানি হচ্ছে কীভাবে? খতিয়ে দেখে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত সিসি ক্যামেরা ও ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি যাতে অন্যের অধিকার খর্ব না করে সেটা পুলিশেরই নিশ্চিত করতে হবে।