দলীয় পক্ষভুক্ত নয় আইনের সুশাসন কাম্য

হিংসার আগুন শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। লাশের সংখ্যা বাড়ছে। গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। অনিশ্চয়তা কালোমেঘ যেন কাটছেই না। অবশ্য এর মাঝে জাতিসংঘের প্রতিনিধি গতকাল কিছুটা হলেও আশা জাগিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উভয়পক্ষই সংলাপে বসতে রাজি। সংলাপের মধ্যদিয়ে নিশ্চয় সমঝোতা হবে। হিংসার আগুনে আমজনতা আর কতো পুড়বে? দেশবাসী স্বস্তির প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে।

 

‌                রাজনৈতিক মতোপার্থক্য থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তা নিয়ে পাশাপাশি দু দোকানি যুক্তির ঝড় তুলতেই পারে। যুক্তি কেন পেশিশক্তি প্রয়োগের দিকে টানবে। অধৈর্য নাকি যুক্তিতে হেরে, তা মানতে না পেরে পিটুনি? চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার আসমানখালী বাজারে পরশু একটি রাজনৈতিক দলের মহিলাদের মিছিল নিয়ে মন্তব্য করার কারণে বিরোধ দানা বাঁধে। যুক্তির বদলে বাগবিতণ্ডা এবং পরিণাম ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ওইদিন রাতেই পার্শ্ববর্তী হাঁপানিয়া গ্রামে হিংসার আগুন লাগে একটি দোকানে। আগুনে দগ্ধ হয় একপক্ষের ৬ জন। দগ্ধদের অভিযোগ তাদের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। দোকানিসহ অন্যদের অভিযোগ, দোকানে ওরা আগুন ধরাতে গেলে দগ্ধ হয়। দুপক্ষের যে পক্ষ যাই বলুক, আগুন যে হিংসার তা নিয়ে সন্দেহ নেই। দোকান পোড়ানোর সময় দগ্ধ নাকি দোকানের সামনে বসে থেকে পেট্রোল বোমার শিকার? এ প্রশ্নের স্বচ্ছ জবাব খুঁজে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ কি গ্রামবাসীর আস্থা অর্জনের মতো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে? দেশের অবস্থাদৃষ্টে সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন। আইনের শাসন স্বস্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

 

অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে যখন দুটি পক্ষ জড়িত তখন পুলিশ কোনপক্ষ নেবে? সহজ জবাব, আইনের দৃষ্টিতে ন্যায় পক্ষই নিতে হবে। পুলিশের ওপর মূলত এ দায়িত্বই বর্তানো হয়েছে। হাঁপানিয়া প্রত্যন্ত একটি জনপদ। একটি গ্রাম। গ্রামপর্যায়ে এ ধরনের হিংসার আগুন সমাজের বিবেকবান মানুষগুলোকে ক্ষতবিক্ষত করছে। অবশ্যই নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পুলিশ নিরাপত্তার প্রতীক, নির্যাতিতের আশ্রয়স্থল। সারাদেশে যে আগুন জ্বলছে সেই আগুনেরই ফুলকি হাঁপানিয়ায়। পুলিশ আর কতোটা দায়িত্বপালন করবে? কোন দিকেই বা যাবে তারা? রয়েছে অপ্রতুলতা। তাই বলে তো হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। সমাজ সুন্দর করতে হলে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে হবে। বলিষ্ঠ এবং সুস্থ ধারার নেতৃত্ব দিয়ে গড়ে তুলতে হবে সম্প্রীতি। দেশে বর্তমানে এটা যে অনুপস্থিত তা বলাই বাহুল্য। দেশ জুড়ে হিংসা, হানাহানি। লাগাতার অবরোধ। খেসারত দিচ্ছে দেশের আমজনতা। হিংসার আগুন যেভাবে ছড়াচ্ছে তা দ্রুত নেভাতে না পারলে পরিস্থিতি এক সময় কারো নিয়ন্ত্রণেই থাকবে না। দুপক্ষের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এটা দ্রুত উপলব্ধি প্রয়োজন।

 

পুলিশকে পেশদারিত্ব মনোভাব নিয়েই দায়িত্বপালন করা দরকার। রাজনৈতিক দল যে পক্ষ যখন যে অবস্থানেই থাকুক না কেন? পুলিশকে আইনের পথেই হাঁটতে হবে। জ্বালাও পোড়াও চলবে আর পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবে তা যেমন মেনে নেয়া যায় না, তেমনই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের দাপটে প্রকৃত অপরাধী পার পেয়ে যাবে তাও প্রত্যাশিত নয়। দলীয় শাসন নয় আইনের শাসনই কাম্য। তা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।