দক্ষতা বৃদ্ধি ও কাজের নিশ্চয়তা বদলে দেবে ছবি

 

বিদেশে গিয়ে গায়ে-গতরে খেটে আর্থিক সচ্ছলতা আনার স্বপ্নে কতোজন যে নিঃস্ব হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। ভালো দেশে মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির প্রতিশ্রুতিতে প্রতারকদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে অনেকে বিপথগামীও হয়েছেন। প্রতারিত কেউ কেউ আইনের আশ্রয়ও নেন। অর্থ উদ্ধার হয়, হয় না। দিশেহারা কেউ কেউ এখন উন্মাদ। এদেরই কাতারে সদ্যযুক্ত চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার জোড়গাছা গ্রামের বশির। আর কতোজন বশিরকে ওইভাবে প্রতারিত হতে হবে? যতোদিন প্রতারকরা প্রতারণার সুযোগ পাবে। তা হলে আইন? অপরাধ প্রবণতা রোধে সহায়ক। দরকার মূল উৎপাটন।

 

যে সমাজে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই, কাজ জুটলেও উপযুক্ত পারিশ্রমিক মেলে না। কর্মস্থলে অনিশ্চয়তা, রাজনীতির লেবেল লাগিয়ে ভাগ্য বদলানোর এক ভয়ঙ্কর খেলা, দুর্নীতিবাজের উত্থান, অর্থশালীদের একক আধিপত্য- সেই  সমাজের কর্মপিপাসুরা প্রবাসের স্বপ্ন ছাড়া কী করবে? প্রবাসে  শ্রম বিকিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর স্বপ্নকে তো সুস্থ চিন্তা-ই বলতে হয়। সেই চিন্তাকে স্বাভাবিক ধারায় রাখতে না পারার ব্যর্থতা অবশ্যই দেশ পরিচালনাকারীদের। বিদেশে শ্রম বিকিয়ে অর্জিত অর্থ যখন দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সহায়ক, তখন জনসংখ্যা বিস্ফোরণে কাবু দেশের কর্তাদের সেদিকে আশু নজরের অতো অভাব কেন? অদূরদর্শিতা নাকি দুর্নীতি? আলোর গতিতে ছড়ানো দুর্নীতিতে লাগাম দেয়া দুষ্কর বটে। তাই বলে হতাশ হলে তো চলবে না, সামলাতে হবে। দক্ষ দূরদর্শী নেতৃত্ব পেলে অবশ্যই সমাজের চিত্র বদলে যাবে।

 

বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে সেসব দেশে মেধার কদর বেশি। মেধাবীদের আদর করেই নাগরিকত্ব দেয়া হয়। যেমন কানাডা। আমাদের দেশের অসংখ্য মেধা কানাডায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। মেধাবীদের সেখানে থাকার সুযোগ দেয়া মানে মেধাবী প্রজন্মে সমৃদ্ধতা অর্জন। কতোটা দূরদর্শী না হলে ওরা মেধার অতোটা আদর করে? যারা মেধাবী, যারা নিজের দেশেও মেধার বদৌলতে দিব্যি ভালো থাকতে পারতো। নিজেদের ভালো থাকাটাকেই গুরুত্ব দিয়ে তারা জাতির প্রতি কতোটা কৃতজ্ঞ, কতোটা অকৃতজ্ঞ তা নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। যাদের পুঁজি শ্রম তাদের দক্ষ করে তুলতে পারলে অবশ্যই তাদেরও কদর বাড়তো, থাকতো জাতির মান। বিগত দিনে বিষয়টিকে গুরুত্বহীন দৃষ্টিতে দেখার কারণেই পস্তাতে হচ্ছে এখন। এখন আগামীদিনের কথা ভেবেই পদক্ষেপ প্রয়োজন।

 

বিলম্বে হলেও বর্তমান সরকার বিদেশে শ্রমিক নিয়োগের ব্যবস্থা করছে। এ ব্যবস্থা স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে রাষ্ট্রীয় অনুসরণীয় নীতি করা হলে, বাস্তবটা হতো অন্যরকম। শ্রমিকদের দক্ষ করতে গ্রাম-বাংলায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে দু ভাগে বিভক্ত করে সকালে প্রাথমিক শিক্ষা, বিকেলে বিদেশি ভাষা শিক্ষাদানের পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিকে উন্নীত করার ব্যবস্থা কল্যাণকর হবে। দক্ষ শ্রমিকের বিদেশে নেয়ার এবং কাজের নিশ্চয়তাদানে সরকারি বাধ্যবাধকতা বদলে দেবে সমাজের ছবি। সুযোগ না থাকলে প্রতারক থাকবে না, প্রতারিত হতে হবে না বশিরদের।