থামছে না খুনের মতো নির্মম ও অমানবিক ঘটনা

 

একের পর এক খুনের ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কতোটা ভীতিপ্রদ সময়ে আমরা আছি। প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় যেভাবে খুনের ঘটনার কথা জানা যাচ্ছে, তা যেন আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়। অথচ নিশ্চিত করেই বলা যায়, যখন একের পর এক নানা পেশার মানুষ খুন হচ্ছে; শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিশু, নারী-পুরুষ কেউ-ই বাদ যাচ্ছে না এই হিংস্র ও ঘৃণ্য মানসিকতার কবল থেকে তখন সার্বিক পরিস্থিতি একটি ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের জন্ম দিচ্ছে। যা দেশ ও জাতির জন্য আশঙ্কাজনক বলাবাহুল্য। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হল থেকে মোতালেব হোসেন লিপু নামের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বলাই বাহুল্য যে, বাবা-মা তথা অভিভাবকরা যখন অনেক আশা নিয়ে সন্তানকে সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য পাঠান, কিন্তু ফেরত পান সন্তানের লাশ, তখন এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না। এই মৃত্যুর ঘটনায় জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় হলের ডাইনিঙের ড্রেন থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাথায় আঘাতজনিত কারণে লিপুর মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে। এছাড়া পুলিশ সূত্র, প্রাথমিকভাবে মনে করছে তাকে খুন করা হয়েছে। কেননা মাথায় বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, পুলিশ এটাও জানিয়েছে, লিপু পরীক্ষা জালিয়াতচক্রের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলো। পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে একবার সে গ্রেফতারও হয়। আর যেহেতু আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে রাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু, সঙ্গত কারণেই এই বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। এছাড়া খুনের ঘটনায় জালিয়াতচক্রের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে, তাও বিবেচনায় নেয়া জরুরি। লিপুর সহপাঠীদেরও ধারণা, প্রক্সির টাকা নিয়ে জালিয়াতচক্রের সদস্যদের সাথে লেনদেন কিংবা চক্রের সদস্যদের পরিচয় ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় ঘটতে পারে এ হত্যাকাণ্ড। যতো দ্রুত সম্ভব এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে সবদিক খতিয়ে দেখেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষা অর্জন করতে এসেও যদি কোনো শিক্ষার্থী জালিয়াতচক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে তবে তা কোনোভাবেই সুখকর নয়। ফলে সুশিক্ষার বিস্তার ঘটাতেও আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা দরকার, বিভিন্ন চক্রের ফাঁদে পড়ে দেশে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। সঙ্গত কারণেই এসব কুচক্রীদের চিহ্নিত করে শক্ত হাতে দমন করার বিকল্প নেই। লিপু হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক। এটা ভুলে গেলে চলবে না, অপরাধীরা ছাড় পেলে তারা আরও বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রক্সি বা যেকোনো ধরনের জালিয়াতি রোধ করা অপরিহার্য। কেননা একজন মেধাবী ছাত্র ভর্তি হতে না পারলে সেই ক্ষতি পুরো দেশেরই। তাই এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সার্বিকভাবে আমরা মনে করি, যেভাবে একের পর এক হত্যালীলায় মেতে উঠছে দুর্বৃত্তরা তা অত্যন্ত ভয়ানক, এমন পরিস্থিতি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে কাম্য হতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে হত্যাকাণ্ডসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা হোক। কেননা দেশকে আরো এগিয়ে নিতে এবং জনসাধারণের জীবন-যাপনকে সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করা অপরিহার্য।