ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল ঈদুল আজহা : ঈদ মোবারক

পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উত্সব। ঈদ অর্থ খুশি বা আনন্দ। ঈদুল ফিতরের আত্মসংযমের মতো এ ঈদেও ত্যাগের শিক্ষা গভীরভাবে নিহিত। শরীয়ত মোতাবেক মালেকে নিসাব বা প্রতি সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে যারা অসমর্থ তাদের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

 

জামাতে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় ও কোরবানির মাধ্যমে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। কোরবানির মাংস গরিব-মিসকিন, আত্মীয় ও অনাত্মীয়ের মধ্যে বিতরণের ফলে সকলেই আনন্দের অংশীদার হয়। কোরবানির চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থের পুরোটাই গরিব-দুস্থদের হক। অন্যদিকে আমরা যখন ঈদ ও কোরবানির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি, তখন মক্কা মুয়াজ্জামায় হাজি সাহেবগণ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক বলে পবিত্র হজব্রত পালন করতে থাকেন। বস্তুত ঈদুল আজহার শিক্ষা হলো, আত্মশুদ্ধি, আত্মতৃপ্তি ও আত্মত্যাগ। পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম জাহানের নির্মল আনন্দোত্সব ও পাশবিক প্রবৃত্তির কোরবানি করে মনুষ্যত্বের নবতর উদ্বোধনের উজ্জ্বল দিন বললে কোনোভাবেই ভুল বলা হয় না। পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তায়ালার নৈকট্য হাসিলের প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় নিজেকে সমর্পণ করে থাকেন।

 

প্রাচীনকালে ব্যাবিলন শহরের উর প্রদেশে জন্মলাভ করেন মুসলিম মিল্লাতের জনক আল্লাহর প্রিয় খলিল একনিষ্ঠ বন্ধু হযরত ইব্রাহিম (আ.)। তিনি ৮২ বছর বয়স পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি একটি সন্তানলাভের আকাঙ্ক্ষায় আকুল হয়ে পরম প্রভু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন- ‘রব্বি হাবলি মিনাস সালেহীন’ হে আল্লাহ আমাকে একটি সৎ সহনশীল সন্তান দান করুন। দয়াময় আল্লাহ প্রার্থনা মঞ্জুর করে বলেন, ‘ফাবাশশার নাহু বি গুলামিন হালিম’ অতঃপর আমিও তাকে একটি সৎ সহনশীল সন্তানের সুখবর দিলাম। জন্মের পর সেই সন্তানের নাম রাখা হলো ইসমাঈল অর্থাৎ- আল্লাহ শোন। যখন ইসমাইল খেলাধুলা করবার বয়সে উপনীত হলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিমকে (আ.) স্বপ্ন দেখালেন ইসমাইলকে কোরবানি করার। সেই সময় ইব্রাহিম (আ.) প্রাণাধিক পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। তিনি সিরিয়া থেকে মক্কায় এলেন। মায়ের নিকট থেকে পুত্রকে বিদায় করে নিয়ে মিনায় চলে গেলেন। সেখানে জনমানবহীন নীরব নিস্তব্ধ ধু-ধু মরুভূমির মধ্যে পুত্র ইসমাইল ও নিজের চোখে কাপড় বেঁধে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে পুত্রকে কোরবানি করার মানসে ছুরি চালালেন। আল্লাহ তায়ালা একটি বেহেশতি দুম্বার মাধ্যমে ইব্রাহিম (আ.) এর কোরবানি কবুল করে নিলেন। সেই দিন থেকে পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের এ প্রথা চিরস্থায়ীরূপ লাভ করলো। আর আমরা যেই কোরবানি করে থাকি সেই বিষয়টি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার দ্বিতীয় বছরে প্রচলিত হয়েছে। সাহাবা ইকরাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মা হাজাল আজাহি? কোরবানি কী জিনিস? রসূল (স.) বলেছিলেন- ‘সুন্নাতা আবিকুম ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম’ কোরবানি হলো আমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নাত। সেই থেকে রসূল (স.) যতোদিন বেঁচেছিলেন প্রতি বছর কোরবানি করে গেছেন। বিদায় হজ্বের সময় তিনি নিজ হাতে ৬৩টি পশু কোরবানি করেছিলেন। আর হযরত আলী (রা.) ৩৭টি কোরবানি করেছিলেন।

 

আমাদের মনে রাখা দরকার, আল্লাহর নিকট কোরবানিকৃত পশুর রক্ত, মাংস, হাড় ইত্যাদি পৌঁছায় না। পৌঁছায় শুধু আমাদের আন্তরিকতা বা সহিহ নিয়ত ও তাকওয়া বা খোদাভীতি। আল্লাহ আমাদের নামাজ ও কোরবানিসহ সকল ইবাদত কবুল করুন। সকলকে ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।