তাগিদ গুরুত্ব পেলে অবশ্যই উজ্জ্বল হবে ভবিষ্যত

 

যে কোনো অনিয়ম শুরুতে প্রতিহত করতে পারলে শেকড়বাকড় ছড়ায় কম। পায়খানার নল পয়ঃনিষ্কাশন নালার সাথে যুক্ত করা বিধিসম্মত নয়। অবৈধভাবেই তা করা হয়েছে। অবৈধভাবে নালায় নল যুক্ত করার বিষয়টি নতুন নয়। দীর্ঘদিনের হলেও এখন তার কুফল পৌরবাসীর ঘাড়েই পড়েছে। দিতে হচ্ছে খেসারত। বিলম্বে হলেও পৌর কর্তৃপক্ষের আশু নজর পড়েছে। কখন? যখন হাজারের অধিক নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছে তখন।

পৌরসভার বিধান অনুযায়ী পৌর এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের পূর্বে তার নকশা অনুমোদন করাতে হয়। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়েছে বহু আগে। এরপরে পৌরসভার অদূরবর্তী পাড়া-মহল্লারই অনেকে নকশা বহির্ভূত টয়লেটের পাইপ পয়ঃনিষ্কাশন নালার সাথে যুক্ত করেছে। পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত হয়ে আসছে। বিষয়টি তেমন গুরুত্ব না পেলেও গত ১ আগস্ট থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় ব্যাপকভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। এক বিজ্ঞপ্তিতে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে, আগামী ১৪ আগস্টের মধ্যে টয়লেটের অবৈধ নল পয়ঃনিষ্কাশন নালার সাথে অবৈধভাবে যুক্ত করা সংযোগ নিজ দায়িত্বে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা। যখন অবৈধভাবে এ সংযোগ স্থাপন করেছেন তখন তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে বর্তমান পৌর পরিষদকে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হতো না। পূর্বের নমনীয়তায় বর্তমানের ভোগান্তি কঠোর হওয়ার যে তাগিদ দিচ্ছে, এ তাগিদ গুরুত্ব পেলে অবশ্যই উজ্জ্বল হবে ভবিষ্যত।

চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার সাথে সাথে পৌর সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। জনস্বাস্থ্য অধিদফতর ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে তা স্বস্তিকর নয়। বরঞ্চ পানি সরবরাহের পাইপ দ্রুত পরিষ্কার করার পাশাপাশি লিকমুক্ত পাইপ স্থাপনেরই তাগিদ ফুটে উঠেছে। কারণ, পৌর সরবরাহকৃত পানির উৎসস্থলে জীবাণু না পাওয়া গেলেও পাবলিক ট্যাপসহ ডায়রিয়া সংক্রমিত মহল্লার যে ক’জনের বাড়ির পানি পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের সকলের পানিতেই ফেকাল কলিফর্ম পাওয়া গেছে। যেহেতু কোনো একক গ্রাহকের বাড়ির পানিতে নয়, যে ক’জনের বাড়ির পানি পরীক্ষা করা হয়েছে সে ক’জনের বাড়িতেই জীবাণুর অস্তিত্ব সেহেতু পৌর পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে ত্রু টিমুক্ত বলা যায় না। অবশ্যই গ্রাহকদের নিজ নিজ দায়িত্বে তাদের রিজার্ভট্যাঙ্কগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পৌর কর্তৃপক্ষ এ তাগিদ যথার্থই দিয়েছে। একই সাথে টয়লেটের পাইপ ড্রেনের সাথে অবৈধভাবে করা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাও জনগুরুত্বপূর্ণ।

কালবিলম্ব না করে অবৈধভাবে টয়লেটের পাইপ ড্রেনে সংযুক্ত করা ব্যক্তিদের নিজ নিজ উদ্যোগে অপসারণে আন্তরিক হতে হবে। তা না করলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে পৌর কর্তৃপক্ষকে অনমনীয় পথেই হাঁটতে হবে। সরবরাহকৃত পানি গ্রাহকের চৌবাচ্চায় পৌঁছুনোর যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে পৌরবাসীরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। বিধি মানতে আন্তরিক না হলে শক্ত হাতে বিধি প্রয়োগই হবে উচিত সিদ্ধান্ত।