তবেই না রেমিটেন্সের অঙ্কে উঠতে তৃপ্তির ঢেকুর

 

প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা হাতে পেয়ে আমরা পুলকিত হই। গর্ব করে বলি রেমিটেন্স অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। অথচ প্রবাসীদের সর্বক্ষেত্রে যথোপযুক্ত মর্যাদা দূরাস্ত, তাদের বিপদে পড়শি দেশের মতো আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াতে আন্তরিক হতে পারি না। মুখে সহযোগিতার হরেক রকম প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ফুটলেও বাস্তবে তার মিল পাওয়া ভার। তা ছাড়া বিদেশে শ্রমবাজার সৃষ্টিসহ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বরাবরই অপ্রতুল। এরপরও নানাভাবে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। পথে মারাও যাচ্ছেন অসংখ্য।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের খাড়াগোদার ৪ যুবক দু জন কথিত দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেয়ার সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ খবর পেয়ে তার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গতপরশু রাতেও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে একটি ট্রলার সাগরে ডুবেছে ৩০ জন যাত্রী নিয়ে। এদের একজন কোনো রকম প্রাণে বেঁচে উপকূলে উঠে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা গা শিউরে ওঠার মতো। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা? দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। যা কিছু গড়ে উঠেছে তার সিংহভাগই রাজধানীকেন্দ্রিক। মাসের পর মাস শ্রম দিয়েও অনেকের বেতন হয় না। বেতন-বোনাস ছাড়াই ঈদের মধ্যে তোবা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের অনশন তারই অন্যতম লজ্জার উদাহরণ। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে না পারার কারণে বিদেশে শ্রম দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর স্বপ্ন অবশ্যই অমূলক নয়। দেশে কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারছি না, অথচ বিদেশি শ্রমবাজারে তাদের নিরাপদে যাওয়ার পথ সুগম করা যাচ্ছে না। বিদেশে শ্রমবাজার গড়ে তোলা এবং দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরেরও পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টিতে সফলতা নেই আমাদের।

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, ভাষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে বিদেশের শ্রমবাজারে জনশক্তি রপ্তানি দেশের চিত্রটাই শুধু পাল্টে দেবে না, বিদেশে ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। বিদেশে শ্রম বিক্রির বৈধ পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়ার কারণেই অনেকে অবৈধভাবে কথিত দালালদের মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি জমান। কেউ পারেন, কেউ কেউ পথেই মরেন। অদক্ষতার কারণে শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের শ্রমের মূল্য শুধু কমই নয়, ভাষাজ্ঞান না থাকার কারণে তাদের অন্য দেশের শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত হতে হয়। কাজও করতে হয় নিম্নমানের। এতে মর্যাদা দেশের যায়। অনেকেই সর্বস্ব বিকিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে প্রতারিত হয়ে বিপথগামীও হয়ে পড়ে। এ থেকে রক্ষা করতে সরকারের আরো আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা জরুরি। জেলায় জেলায় যুব প্রশক্ষিণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও তা যে চাহিদার কাছে নস্যি এটা সরকারের নীতি নির্ধারকদের উপলব্ধি করা জরুরি। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সকালে প্রাথমিক শিক্ষা বিকেলে কারিগরি শিক্ষাসহ শ্রমবাজারের চাহিদামাফিক ভাষাজ্ঞান বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নেয়া যেতে পারে।

প্রবাসীদের হাড় ভাঙা পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ শুধু তাদের পরিবারকেই সচ্ছল করে না, তাদের প্রেরিত অর্থেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়, হচ্ছে। মাঝে মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে স্বল্প খরচে শ্রমিক নিয়োগের বিশেষ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়। মালয়েশিয়ার মতো আরো অনেক দেশ রয়েছে যেখানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা প্রচুর। তা খুঁজে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়ে তারা যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা লজ্জার। ওরকম ভুল এবং অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত পরিহার করে প্রবাসে পাড়ি জমানোদের প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। তবেই না রেমিটেন্সের অঙ্কে উঠতে তৃপ্তির ঢেকুর।