তথ্যপ্রযুক্তি হোক আস্থার প্রতীক : নিশ্চিত হোক নিরাপত্তা

 

তথ্যপ্রযুক্তি শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি, রকমারি সুবিধা করে দিয়েছে। যে ব্যাংকেরই গ্রাহক হন না কেন, সার্বক্ষণিক টাকা সরবরাহের ছোট্ট ঘরে গিয়ে প্রয়োজনে টাকা নেয়া যাচ্ছে। দূরে টাকা পাঠানো নিয়ে দুর্ভাবনা? মোটেও না। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে চোখের পলকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টাকা আদান-প্রদান সম্ভব হচ্ছে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বিল পরিশোধের বিড়ম্বনা? তাও নেই। তথ্যপ্রযুক্তি পাল্টে দিয়েছে সে ছবি। শুধু কী তাই? ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনা-বেচা, দূরের নাতির সাথে দাদা-দাদির সচিত্র কথা বলা থেকে কী হচ্ছে না? সবই হচ্ছে। এতো সুবিধার মধ্যে কিছু অসুবিধাও ওত পেতেছে। কেমন?

 

গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় পৃথক দুটি প্রতিবেদনের একটিতে বলা হয়েছে, বিকাশ এজেন্টের সেলফোনে ভুয়া ম্যাসেজ দিয়ে টাকা হাতিয়ে সটকানোর সময় ধরা পড়া তিন যুবকের স্বীকারোক্তিতে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর পানির বিলও ঘরে বসে সেলফোনে পরিশোধ করা যাবে। তাহলে আর কি থাকলো? সবই যখন হচ্ছে তখন অসুবিধাটা কি? অসুবিধাটা হলো- তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের পাশাপাশি মেধাবী কিছু ব্যক্তির অশুভ অপতৎপরতা। এতে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি পদে পদে। যেমন প্রতারিত হওয়ার কবল থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের বিকাশ এজেন্ট। তিনি কীভাবে প্রতারিত হচ্ছিলেন? টাকা আদান-প্রদানের সেলফোনে যেভাবে ম্যাসেজ আসে ঠিক সেভাবেই টাকা প্রদানে ম্যাসেজ পেয়েছিলেন তিনি। ম্যাসেজ পেয়ে টাকাও তুলে দিয়েছিলেন প্রযুক্তিতে পারদর্শী প্রতারকের পাঠানো তার তিন সহযোগীর হাতে। টাকা নিয়ে সরে পড়ার মুহূর্তে বিকাশ এজেন্ট আরো একটু যাচাই করতে গিয়েই টের পান, তিনি প্রতারিত হচ্ছেন।

 

নিজের পরিচয় গোপন করে অন্যের পরিচয়ে মেল প্রেরণ, মোবাইলফোনে ক্ষুদ্রবার্তা প্রেরণ প্রযুক্তিরই কারসাজি। এ কারসাজি সাধারণ মানুষ বুঝবেন কীভাবে? সে কারণেই প্রযুক্তিতে পারদর্শী তথা বিশেষজ্ঞদেরই প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তথ্যপ্রযুক্তি যেহেতু বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। গোটা বিশ্বকে করেছে একটি গ্রাম। এ সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ প্রযুক্তির নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়নি। ক’দিন আগে গ্রামীণফোনের চুয়াডাঙ্গার একটি প্রতিষ্ঠানের এক ব্যক্তির সেলফোনের নম্বর ব্যবহার করে বেশ কিছু ব্যক্তির সেলফোনে আপত্তিকর ম্যাসেজ প্রেরণ করা হয়। যে নম্বর থেকে ম্যাসেজ প্রেরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন, সেই নম্বর থেকে ওই ম্যাসেজ প্রেরণ করা হয়নি। তাহলে কে বা কারা তাদের নিজেদের পরিচয় গোপন করে অন্যের নম্বর ব্যবহার করে ম্যাসেজ প্রেরণ করলো? দ্রুত ওই প্রতারককে শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারলে শুধু বিভ্রান্তিই ছড়াবে না, বড় ধরনের ক্ষতিরও আশঙ্কা বিরাজমান।

 

প্রযুক্তির সুবিধা নিলেই হবে না, প্রযুক্তির নিরাপত্তাও শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির চমক লাগানো সুবিধা নিতে গিয়ে প্রযুক্তিরই কারসাজিতে প্রতারিত হোক তা মেনে নেয়া যায় না। যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রাসারণ ও তার রকমারি সুবিধা বদলে দিচ্ছে আর্থসামাজিক চিত্র, সেহেতু প্রযুক্তির নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। আর তা করতে হলে প্রযুক্তিবিদদেরই কাজে লাগাতে হবে। একই সাথে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আপত্তিকর ওয়েবসাইট দেশের কোমলমতিদের যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেদিকেও আন্তরিক দৃষ্টি দিয়ে বিশুদ্ধকরণের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিকে আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলাই হবে সময়োচিত কাজ।