ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতা দরকার

দেশে গরম বৃদ্ধির সাথে সাথে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অধিক মাত্রায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মহাখালীর আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মার্চ হতে ৩ এপ্রিল বিকেল চারটা পর্যন্ত এ হাসপাতালে চার হাজার ১৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে গড়ে প্রায় ২২ জন রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচ হতে ১২ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা সর্বাধিক। এরপরই বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, সারাদেশে গত এক সপ্তায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার সহস্রাধিক রোগী। গত এক মাসে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এ পানিবাহিত রোগে। সরকারি ও বেসরকারি হিসাব একসাথে বিশ্লেষণ করলে অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়। তার কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের একজন আইটি অফিসার জানিয়েছেন যে, দেশের আটটি জেলা থেকে প্রতিদিন ভর্তি হওয়া রোগীর তথ্য জানানো হয় এ অধিদফতরে। আর অন্য জেলাগুলো থেকে ১৫ দিন পরপর তথ্য সরবরাহ করা হয়। অর্থাৎ সরকারি হিসাব যথারীতি আপডেট করা হয় না বলেই সারাদেশের ডায়রিয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে এই মুহূর্তে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া কঠিন। তবে আমরা মনে করি, তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে এ কাজটি সম্পন্ন করা মোটেও কঠিন নয়। প্রতিদিন বিকেল চারটার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ওইদিনই সন্ধ্যায় কেন্দ্রে পাঠানো হলে একটি সম্যক চিত্র পাওয়া এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। বিশেষ বিশেষ সময় ও জরুরি মুহূর্তে সরকারের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তা সহায়ক হবে। সারাদেশে এমন একটি কার্যকর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।

সব মিলিয়ে চৈত্রের এ কাঠফাটা গরমে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা যে বাড়ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই ডায়রিয়া মোকাবেলায় অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মতে, পুরো এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত সারাদেশে ডায়রিয়ার প্রভাব থাকবে। সাধারণত প্রচণ্ড গরমের কারণে পানি দূষিত হয়। এতে চাঙ্গা হয় রোগ জীবাণু। দূষিত পানি ও খাবার খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফুটপাতের ধুলোবালি মিশ্রিত শরবত বা অন্য কোনো কোমল পানি পান করলে কিংবা পচা-বাসি খাবার খেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। একসময় বাংলাদেশে কলেরায় অনেকের মৃত্যু হতো। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেতো। কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের সফল সব আবিষ্কারের ফলে ডায়রিয়ার চিকিত্সা আজ সহজ ও সুলভ হয়েছে। বিশেষ করে মহাখালীস্থ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের নানা আবিষ্কার ও সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপের পর পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এতে আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। কেননা পরিবেশ দূষণ ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া আবারও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব যখন বাড়ে, তখন আমাদের দেশে আরেকটি সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা আসলে ব্যবস্থাপনার। তা হলে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে ওরস্যালাইনের দাম বেড়ে যায় হু হু করে। যেমন কয়েকদিন আগেও পাইকারি দোকানে কার্টন প্রতি ওরস্যালাইনের দাম ছিলো এক হাজার হতে ১২শ টাকা। এখন তা বেড়ে ১৬শ টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ডাক্তারদের মতে, ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন ও পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে। তাই বাজারেও ওরস্যালাইনের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও সুলভ করতে হবে এ সময়ে। এজন্য সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। তবে ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় আসলে জনসাধারণের সতর্কতা ও সচেতনতাই প্রধান দাওয়াই। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ উত্তম। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে এ কথা আরও প্রযোজ্য। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের পানি ও খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি সতর্কতা অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে।