ডাকঘর হবে ই-কমার্সের কেন্দ্রবিন্দু

 

দেশের সকল ডাকঘরকে ই-কমার্সের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেই লক্ষ্যে সরকার প্রায় ১০ হাজার ডাকঘরকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্প্রতি এক সেমিনারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এই কথা জানিয়েছেন। বর্তমানে দেশে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ই-কমার্স বাজার তৈরি হয়েছে। এই বাজারকে গতিশীল ও সম্প্রসারণ করতে ডাকবিভাগ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ ডাকবিভাগের রয়েছে দেশব্যাপী অবকাঠামো, কিন্তু এটিকে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তিনির্ভর করিয়া গড়ে তুলতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে ই-কমার্স এখন একটি বাস্তবতা এবং এট দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। মানুষ ঘরে বসে ইন্টারনেটে পণ্যের চিত্র ও গুণাগুণ সম্পর্কে অবগত হয়ে পণ্যের অর্ডার দিয়ে থাকে এবং কোম্পানির দায়িত্ব তা গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছিয়ে দেয়া। পোশাক থেকে গ্রন্থ, মাংস থেকে সবজি। অনেক কিছুই আজকাল ই-কমার্স পদ্ধতিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই প্রবণতাটি এমনকি বাংলাদেশেও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন এর সরবরাহের অংশটি অধিক গতিশীল ও সাশ্রয়ী হওয়া প্রয়োজন। এই স্থলে ডাকবিভাগ তার অবকাঠামো ও সেবার মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে পারে।

সিঙ্গাপুরের ডাকবিভাগ সিঙ্গপোস্ট নতুন শতকে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে প্রথমে আমেরিকান দোকান থেকে সিঙ্গাপুরের বাসায় পণ্য সরবরাহের কাজ শুরু করে। এর পরে দেশে উত্পাদিত পণ্যের সরবরাহের দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে এসপি ই-কমার্স সেবা চালু করে তারা এশীয় নানান দেশে সেবা প্রদান শুরু করে। তারা এশীয় ও বৈশ্বিক নামী ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে। একই ব্যবস্থা উন্নত সকল দেশে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাপান পোস্ট অস্ট্রেলিয়ায় বৃহত্তম বেসরকারি প্যাকেজ ডেলিভারি কোম্পানি টোল হোল্ডিংসকে ক্রয় করেছে এবং এইভাবে ইউপিএস ও ফেডএক্স-এর মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার কোম্পানির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। আমেরিকান পোস্টাল সার্ভিস ২০১৪ সালে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার লোকসান গুনেছিলো, কিন্তু তারাই এখন আমাজনের রবিবারে ডেলিভারির দায়িত্ব নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া পোস্ট এখন চীনের বৃহৎ ইন্টারনেট কোম্পানি আলিবাবার সাথে যৌথভাবে কাজ করছে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমাজ ও ভোক্তাদিগের মধ্যকার সেতু হিসেবে। তাইওয়ানে রয়েছে ই-পোস্ট সেবা, যার মাধ্যমে কম্পিউটার কিয়স্ক থেকে ক্রেতারা ইন্টারনেটে তাদের পছন্দের পণ্যের অর্ডার দিয়ে থাকেন এবং ডাকবিভাগ তাহা গৃহে গৃহে পৌঁছিয়ে দেন। ভারতেও স্পিডপোস্ট সেবার মাধ্যমে ই-কমার্স লেনদেনে ডাকবিভাগ নেতৃত্ব দিচ্ছে।

মোবাইলফোন হাতে হাতে পৌঁছিয়ে যাওয়ার পরে ডাকবিভাগের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদানের হার দ্রুত কমে আসে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ডাকবিভাগ স্লোগান নিয়েছিলো চিঠি লিখুন, এটি স্থায়ী। কিন্তু এই আকর্ষক স্লোগান ক্রমাবনত চিঠি লেখার হার ঠেকাইতে পারেনি। তাই পুরো ডাকবিভাগকেই পাল্টানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কাজটি খুব সহজ হবে না। অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অর্থব্যয় করতে হবে, পুরাতন কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের কাজটি অধিক চ্যালেঞ্জিং হবে। পাশাপাশি নতুন-স্মার্ট ও ডিজিটাল সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এই পরিবর্তনে আমাদের শামিল হতে হবে।