জীবন সংগ্রামে আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়

 

পরীক্ষায় অকৃতকার্য মানে মেধাহীন ভাবা যেমন অন্যায়, তেমনই সব সময় সকল উত্তরপত্র সকল শিক্ষকই যে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেন তাও নিশ্চিত নয়। তা ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর তুলতেও যে ত্রুটি হয় তারও প্রমাণ রয়েছে। তা হলে পরীক্ষায় অকৃতকার্যের কথা শুনেই লজ্জিত হতে হবে কেন? কেন আত্মহত্যার মতো পথে পা বাড়াতে হবে? জীবন সংগ্রামে আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, যদিও বুঝে না বুঝে কটূক্তি আর প্রবণতার কুপ্রভাব ডেকে আনছে সর্বনাশ।

গত পরশু এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কথা শুনেই চুয়াডাঙ্গার দু প্রান্তের দু শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানোসহ ফরিদপুরেও একজনের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। অতোটুকু বয়সে ওদের আত্মঘাতী হওয়ার জন্য সমাজ কী দায়ী নয়? একের পর এক আত্মহত্যার খবরে বলতে আর দিধা নেই যে, সমাজে আত্মহত্যা প্রবণতা পেয়ে বসেছে। পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে, বেকারত্বের কারণে নেশাগ্রস্ততাসহ নানা কারণেই সমাজে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্মহত্যা যে তারই কুপ্রভাব তা বলাই বাহুল্য। শুধু কি পরীক্ষায় ফেল করার কারণে উঠতি বয়সীরা আত্মঘাতী হচ্ছে? না। পাখি জামা না পেয়েও অভিমানী হয়ে ওই ক্ষতিকর প্রবণতায় প্রভাবিত হচ্ছে অনেকে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে শুধু পুস্তক পাঠে নয়, সমাজের ক্ষতিকর প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকার মতো শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে না পারার দায় মুক্ত হতে পারেন না শিক্ষকমণ্ডলীও। শুধু আত্মহত্যা নয়, বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রবণতা সমাজকে অসুস্থ করে তুলেছে। অসুস্থ সমাজের কোনো পরিবারই নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারে না। নিরাপদ ভাবা মানে খানেকটা বোকার স্বর্গে বাস করা।

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে অনেক অভিভাবক তার সন্তানের ওপর উগ্র আচরণ করেন। পাশের বাড়ির ছেলে-মেয়ে ভালো রেজাল্ট করে উল্লাস করছে দেখে নিজের সন্তানের ব্যর্থতার গ্লানি উগ্রে দেয়ার কারণেও অনেকে আত্মঘাতী হয়ে ওঠে। শুধু লেখাপড়া নয়, সন্তানের যে কোনো ব্যর্থতাকে লজ্জার কারণ হিসেবে না দেখে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। ব্যর্থতাকে কীভাবে সফলতায় নেয়া যায় সেদিকেই বাড়তি নজর দেয়া দরকার। ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’ মানসিকতা গড়ে তুলতে উপদেশের বদলে তাকে উপযোগী করাই শ্রেয়। যেহেতু পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য নিরানব্বই ভাগই অধ্যবসয় আর একভাগ মেধা, সেহেতু লেখাপড়ায় মনোনিবেশই ভালো ফলাফলের নিয়ামক। আবার যারা ভালো লেখাপড়া করেও পরীক্ষার ফলাফলে অকৃতকার্য তাদের সকলকেই ঢালাওভাবে লেখাপড়া করেনি বলে কটাক্ষ করা ঠিক নয়। উত্তরপত্র মূল্যায়নে যেমন ত্রু টি থাকতে পারে, তেমনই নম্বরফর্দে নম্বর তুলতে গিয়েও অঘটন ঘটতে পারে। সে কারণেই খাতা পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ রয়েছে।

প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের তরফে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের বিষয়টি ভাবতে হবে। যে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করেছে তাদের খাতা পুনঃনিরীক্ষণের মাধ্যমে অকৃতকার্যের বিষয়টি যাচাই করারও উদ্যোগ নেয়া দরকার। যদি উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী শিক্ষক বা নম্বরপত্রে নম্বর তুলতে কোনো কর্মচারীর ত্রুটিই শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য করেছে বলে প্রমাণিত হয় তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। একই সাথে আত্মহত্যা প্রবণতা রোধেও বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন।