জীবন রক্ষাকারী দুটি নতুন টিকা সংযোজন এবং

বাংলাদেশের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে জীবন রক্ষাকারী দুটি নতুন টিকা সংযোজন করা হয়েছে। গত শনিবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ টিকা দুটি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। টিকা দুটির নাম নিউমোককাল ভ্যাক্সিন (পিসিভি) ও ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাক্সিন (আইপিভি)। প্রথম টিকাটির কারণে নিউমোনিয়ার প্রকোপ থেকেও শিশুরা রক্ষা পাবে এবং দ্বিতীয় টিকাটি পোলিও প্রতিরোধ করবে। এ দুটি টিকা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ত্রিশ লাখেরও বেশি শিশু উপকৃত হবে। এ টিকা দুটি প্রদানে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এবং গ্লোবাল পোলিও এরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ (জিপিইআই) সহযোগিতা করছে। এ উদ্যোগকে সকলেই সযে স্বাগত জানাবে তা বলাই বাহুল্য।

আয়োজকরা বলেছেন, এখন থেকে এক বছরের কম বয়সী শিশুরা ইপিআই’র নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী মোট তিনবার ওপিডি টিকা পাবে। আগে ইপিআই কর্মসূচিতে শিশুরা ৬, ১০, ১৪ সপ্তা ও ৯ মাস বয়সে মোট চারবার ওপিডি টিকা পেতো। এখন ১৪ সপ্তা বয়সে ওপিডি টিকার সাথে ইনজেকশনের মাধ্যমে এক ডোজ আইপিডি টিকাও দেয়া হবে। ফলে নয় মাস বয়সে ওপিডি টিকার চতুর্থ ডোজটি আর নিতে হবে না। বাংলাদেশ সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে পোলিওমুক্ত দেশ। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশসহ ১১টি দেশকে পোলিওমুক্ত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে পোলিওমুক্ত টিকা গ্রহণে এ অবস্থান ধরে রাখতে আরও সহায়তা করবে। বিকলাঙ্গ ও অক্ষম করে দেয়া রোগ নির্মূলে বিশ্ব প্রচেষ্টাকে আরও সুসংহত করবে। যেকোনো একটি দেশে একটি শিশুও পোলিও আক্রান্ত হলে সারাবিশ্বের সব শিশুই তাতে বিপদগ্রস্ত হয় বা তার আশঙ্কা থাকে। তাই এটাকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে আইপিভির ভূমিকা অত্যাবশ্যকীয়। অন্যদিকে নিউমোনিয়া রোগের কথা আমরা সকলেই কম-বেশি জানি। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এ রোগ।

পরিসংখ্যানে জানা যায়, আমাদের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর ২২ শতাংশ নিউমোনিয়াজনিত। আর সারাবিশ্বে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী ৫ লাখ শিশুর প্রাণ কেড়ে নেয় নিউমোনিয়া। এ মৃত্যুর বেশির ভাগই ঘটে তৃতীয় বিশ্ব বা উন্নয়নশীল দেশসমূহে। তাই পিসিভির প্রবর্তন আমাদের হাজার হাজার শিশুর বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃঢ় বিশ্বাস।

বাংলাদেশে উচ্চ টিকাদান হারের সাথে পিসিভি এবং আইপিভি এ দুটি টিকা সংযোজন একটি যথার্থ পদক্ষেপ। বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর এ ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ২০১৩ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে পোলিও এরাডিকেশন অ্যান্ড গেম স্ট্রাটেজিক প্ল্যান ২০১৩-২০১৮ গ্রহণ করা হয়। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা এবং মুখে খাওয়ানো পোলিও টিকা ধীরে ধীরে তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সে পরিকল্পনা মাফিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ধরনের টিকার উদ্যোগ নিয়েছে। উভয় টিকা সফলভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। এর শতভাগ সাফল্যই কাম্য।