জাতীয়করণ হয়েছে : বেতন হয়নি

 

চাকরি জাতীয়করণের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক শিক্ষকের আর্থিক সুফল না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। তবে শুধু বেতন-ভাতাই নয়, দীর্ঘ সাত মাস ধরে এসব শিক্ষকের অনুদানের বেতন-ভাতাও (এমপিও) বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, যা মোটেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দেশের প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিন ধাপে সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয়করণের কেন্দ্রীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করলেও শিক্ষকদের চাকরির সময়কাল গণনা সম্পন্ন না হওয়া, মাঠপর্যায়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিসে বরাদ্দ না পাঠানো এবং মহাহিসাব নিরীক্ষকের অফিস থেকে অর্থ ব্যয়ের কোনো নির্দেশনা প্রেরণ না করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই যে ঘটেছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকটভাবে বিরাজমান। আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্ক ও আমলাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হয়। প্রাথমিক শিক্ষকদের ভোগান্তির এ চিত্র তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। আমরা মনে করি, দ্রুত এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে জাতির ভিত্তিস্তর। এ বাস্তবতা মেনে নিয়ে ১৯৯৩ সাল থেকে দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষা উপবৃত্তি, অবৈতনিক শিক্ষা ও খাদ্য ব্যবস্থাসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ অবশ্যই প্রসংশার দাবিদার। তবে এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষকদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো নিয়েও ভাবতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষকরা হচ্ছেন জ্ঞান ও বিদ্যাদাতা। ঘরে ঘরে জ্ঞান-প্রদীপ প্রজ্বলনে তাদের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। মানুষ গড়ার কারিগর- শিক্ষকদের বৈষম্যের বৃত্তে বন্দি রেখে শিক্ষাক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জনের আশা দুরাশায় পরিণত হবে। সরকার বিলম্বে হলেও এ বিষয়টি উপলব্ধি করে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করেছে। চাকরি জাতীয়করণের সুফল এখন যাতে শিক্ষকরা পান, সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। একই সাথে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করার দিকেও মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। পাঠদানের ক্ষেত্রে তাদের আরও দায়িত্বশীল, ন্যায়নিষ্ঠ ও উন্নত মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে। বস্তুত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে হলে সরকার ও শিক্ষক উভয়কেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। কাজেই শিক্ষকদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি সরকারের উচিত জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পাওয়ার বিষয়টি ত্বরান্বিত করা। এ ব্যাপারে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে- এটাই প্রত্যাশা।