জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক পানিচক্র তীব্রতর হচ্ছে

পানির অপর নাম জীবন। এ কথাটি সনাতন হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ পানি ছাড়া আমাদের জীবন একেবারেই অচল। কেবল পান করার জন্যই নয় অন্যান্য জরুরি কাজেও পানির অপরিহার্যতা অস্বীকার করার উপায় নেই। ব্যবহারিক জীবন থেকে শুরু করে কৃষিকাজে পানি খুবই জরুরি। পৃথিবীতে স্থলভাগের চেয়ে জলভাগ বেশি। তারপরেও পানি সংকট দূর হচ্ছে না। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু এলাকা পানির কারণে তীব্রভাবে খরাপ্রবণ। পানির কারণে একদিকে যেমন জমির ঊর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে ব্যাপকভাবে ফসলহানি হচ্ছে, বৃক্ষ মরে যাচ্ছে।
এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বিশ্বের ৩৬০ কোটি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষ বছরে অন্তত এক মাস পানি সংকটে ভোগেন। আর এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৫৭০ কোটি পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)। ২০১৮ সালের বিশ্ব পানি উন্নয়ন প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। এতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার হুমকির মুখে থাকা কোটি কোটি মানুষের পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সবুজনীতি’ গ্রহণ করতে হবে। পানির সরবরাহ ও মানোন্নয়নের জন্য সব দেশের সরকারকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। সোমবার ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় বিশ্ব পানি সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এটা সত্য, বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপী সুপেয় পানির বড় অভাব। রাজধানী ঢাকায় তো পানি সংকট লেগেই আছে। গ্রীষ্মকালে এই সংকট আরও তীব্র হয়। এর পাশাপাশি রয়েছে দূষিত পানি। এই পানি পান করে অনেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন অনেকটা প্রতিকারহীনভাবে। পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্য, নর্দমা ও ড্রেনের ময়লাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ মিশে সেই পানি বিষাক্ত হয়ে আছে।
এই পানির জন্যই অনেক মানুষকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ এবং প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যস্ত এলাকায় সুপেয় পানির বড়ই সংকট। এই সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে পৃথিবীর বহু মানুষকে। যদি যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয় তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ পানির তীব্র অভাবের মধ্যে পড়বে। একথা সত্য, উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোয় পানির চাহিদা অনেক বেশি বেড়েছে। একই সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক পানিচক্র তীব্রতর হচ্ছে। এর ফলে পানিসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোয় পানি আরও বাড়ছে আর খরাপ্রবণ এলাকাগুলোয় পানির আরও সংকট দেখা দিচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বন সংরক্ষণ কর্মসূচি ও কৃষকদের পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে অনেক দেশই উপকার পাচ্ছে। সুতরাং প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন করতে হবে। তথাকথিত মানুষের তৈরি অবকাঠমো যেমন সংরক্ষণাগার, সেচ খাল ও পরিশোধন কেন্দ্র এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য মাটি ব্যবস্থাপনা, ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো ও সংরক্ষণ করা, পানি বিশুদ্ধকরণ ও আশপাশের জলাধারে তা সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আশার কথা অনেক দেশই তা করছে এবং সফলও হয়েছে। আবার অনেক দেশই এ ব্যাপারে পাইলট প্রকল্প শুরু করার পরিকল্পনা করছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। মানুষ যদি সচেতন হয় এবং কৌশলগত প্রাকৃতিক পন্থা অবলম্বন করে তা হলে পানি সমস্যার অনেকটাই সমাধান সম্ভব। সবার আগে বিশ্ব নেতাদের এ ব্যাপারে তৎপর ও মনোযোগী হতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।