জনসাধারণকে হয়রানি করা হচ্ছে না, এ চিত্রই কাম্য

 

অবশ্যই মেহেরপুরের রাজাপুর গ্রামের সকল মানুষ পুলিশের ওপর হামলা করেনি। যারা হামলার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক- এটা গ্রামের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষও চায়। পুলিশ যদি গ্রামের সকলকেই হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করে তাহলে তাকে হয়রানি ছাড়া আর কি বলা যায়? আইনেরই ভাষায় বলা হয়, ১০ জন অপরাধী পার পেলেও একজন নিরাপরাধী যেন হয়ারানির শিকার নয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। সেই নজর রাখলে নিশ্চয় গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়াতো না, গ্রাম হতো না পুরুষশূন্য। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের যেমন মন্থরগতি কাম্য নয়, তেমনই সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই হয়রানির শিকার হোক তা মেনে নেয়া যায় না।

 

হরতালের নামে ভয়তাল সম্পর্কে নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। হরতালের মতো কর্মসূচি যে ক্ষতিকর তা আহ্বানকারীরাও বোধকরি জোরালোভাবে অস্বীকার করেন না। আন্দোলন কর্মসূচি গণতান্ত্রিক অধিকার। যারা হরতাল আহ্বান করেন তারা বাধ্য হয়েই হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করার কথাও অনেক সময় উল্লেখ করেন। হরতাল আহ্বান করার পর তা মানতে বাধ্য করার অধিকার কিন্তু হরতাল আহ্বানকারীদের নেই। হরতাল সমর্থন করবে কি করবে না সে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার সাধারণ মানুষের। আর যখনই সাধারণ মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করা হয় তখনই দেশের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। অবশ্য কখনো কখনো ক্ষমতাসীনদের খুশি করতেও পক্ষপাতমূলক আচরণ করে পুলশ। তাই বলে পুলিশের ওপর হামলাকে কি সমর্থন করা যায়। কেউ কেউ বলতেই পারেন, দল বা কোনো গোষ্ঠী যখন আইন প্রয়োগকারীদের ওপর আস্থা হারায় তখন আইন হাতে তুলে নেয়া ছাড়া ওরা কিই বা করবে। এ যুক্তি কি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায়? পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি যাই থাকুক, স্বাধীন সার্বভৌম দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর হামলা গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই আইনে সোপর্দ করতে হবে। নজর রাখতে হবে, দোষীদের ধরতে গিয়ে নির্দোষ সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয়। হয়রানি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ওপর আস্থাহীনতা সৃষ্টি করবে। যা জাতির জন্য কখনোই মঙ্গলকর নয়। কারণ পুলিশই তো নিরাপত্তার প্রতীক। আশ্রয়স্থল বললেও ভুল হয় না।

 

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে পুলিশের সাথে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্রসংগঠন শিবিরের তুমুল সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন অনেক। এ বিষয়ে মামলা চলছে। সাধারণকে ধরে অর্থবাণিজ্যে হচ্ছে বলে অভিযোগও আছে। অপরদিকে মেহেরপুরের রাজনগরসহ কয়েকটি স্থানে জামায়াতের হরতালের দিন সংঘর্ষ হয়। গ্রেফতার এড়াতে দোষীদের অনেকেই যেমন আত্মগোপন করে, তেমনই ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন অনেকেই হয়রানির আশঙ্কায় গ্রাম ছাড়া। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এরকমই চিত্র ফুটে উঠেছে। পুলিশের তরফে জনসাধারণকে হয়রানি করা হচ্ছে না, এ চিত্রই কাম্য। পুলিশ সুপার আশু পদক্ষেপ নিলে এলাকায় স্বস্তি ফিরবে। বন্ধ হোক হয়রানি।