জনপ্রতিনিধিদের আচরণ ও বাক্যসংযমী হতে হবে

গণমাধ্যমে সমালোচনা থেমে নেই। শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু থেমে নেই জনপ্রতিনিধিদের সংবর্ধনা। বড় বড় পদ পাওয়া জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ এলাকায় সংবর্ধিত হচ্ছেন। সংবর্ধনার নামে অনুগামীদের উপহার-উপঢৌকন নেয়া বন্ধ হয়নি। থেমে নেই জাঁকজমকের তোরণ নির্মাণ। এমনই এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে ক্রেস্টের বদলে ক্যাশ চেয়ে বসেছেন জাতীয় সংসদে সরকার দলের চিফ হুইপ। আগের দিন বলা কথা অনুযায়ী পরদিন তিনি দলীয় কার্যালয়েও বসেছেন।

আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংবর্ধনার সংস্কৃতি নতুন নয়। সংবর্ধনার বাহুল্য সব সময়ই দেখা যায়। এলাকায় কেউ কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করলে তাকে সংবর্ধনা দেয়া যেতেই পারে। এলাকার মানুষের ভালোবাসার প্রকাশ এ সংবর্ধনার ভেতর দিয়ে ঘটে। কিন্তু যিনি এলাকার জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাকে তো ওই ভোটের মাধ্যমেই সংবর্ধিত করা হয়েছে। তার জন্য নতুন করে সংবর্ধনার কী প্রয়োজন? হতে পারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। সে জন্য তো তাকে নির্বাচিত করেছে যে এলাকার মানুষ, তাদেরই সংবর্ধনার আয়োজন করা প্রয়োজন। কারণ জনগণের ম্যান্ডেট তার পক্ষে গেছে বলেই তিনি পদাধিকারী হতে পেরেছেন। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে তোষণের দূষণ এতো ব্যাপকভাবে ঘটে গেছে যে রাজনীতিবিদরা স্থান-কাল-পাত্র ভুলে যান। গত শুক্রবার চিফ হুইপের সংবর্ধনা বেশ সাড়ম্বরেই হয়েছে। সেখানে ক্রেস্ট প্রদানের হিড়িক পড়েছিলো বলে জানা যায়। এমনও হতে পারে যে, একের পর এক ক্রেস্ট নিতে নিতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর সে জন্যই তিনি ক্রেস্টের বদলে ক্যাশ চেয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে চিফ হুইপ জানিয়েছেন, নিজের জন্য নয়, তিনি ক্যাশ চেয়েছেন দলের জন্য। কিন্তু যে মঞ্চে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন, ওই মঞ্চটি তার দলের তহবিল সংগ্রহের মঞ্চ ছিলো না, এ বিবেচনাবোধের পরিচয় দিতে হতো তাকে। দলের জন্য ক্যাশ প্রয়োজন হয়। দল চালাতে গেলে প্রচুর অর্থের সংস্থান করতে হয়। কিন্তু দলের অর্থ ও তহবিল সংগ্রহের জন্য সদস্যদের চাঁদার বাইরে অনুদান নেয়ার রেওয়াজও আছে। প্রকাশ্য জনসমাবেশে মানুষকে নগদ টাকা প্রদানের আহ্বান জানানোরও একটি নিয়ম আছে। সেই নিয়ম কি তিনি মেনেছেন?

আমাদের জনপ্রতিনিধিদের সংযমী হতে হবে। শুধু আচরণে নয়, তাদের বাকসংযমীও হতে হবে। দেশ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এখন রাজনীতিবিদরাই পারেন সংকট উত্তরণে সঠিক ভূমিকা রাখতে। তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন- এটাই প্রত্যাশা সবার।