জনতার একস্লিপ -গ্রেফতার-রিমান্ডের উদ্দেশ্য সফল হবে কি?

আ.শু.বাঙালী

 

নিজের চিকিৎসার জন্য পাশের দেশ ভারতে যাওয়ার আগে দেখেছিলেম শুনেছিলাম বিএনপির নীতি নির্ধারক পর্যায়ের পাঁচজন নেতাকে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি উসকানি দেয়ার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদ করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিলো। আদালত রিমান্ডের জন্য শুনানির দিন ধার্য করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়েছিলো। ভারতে অবস্থানকালে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছিলো। তবে মনে মনে আন্দাজ করেছিলাম হয়তো বা আমি দেশে ফেরার আগেই ধৃত নেতাদের জামিন মঞ্জুর এবং একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হয়ে যাবে। দেশে ফিরে আর হরতালের ভয়তাল পোয়াতে হবে না। কিন্তু দেশে ফিরেই শুনলাম গ্রেফতারকৃত নেতাদের কেউ মুক্তি তো পায়ইনি বরং আদালতের আদেশে তাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সমঝোতার লেশমাত্র নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মীর্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন তিনি নাকি সরকারের সাথে তিন-চার দিন ধরে যোগাযোগ করেও সফল হননি, এদিকে সরকার পক্ষের সকলেই সেই একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন, সংলাপের দরজা এখনও খোলা আছে।

 

আমজনতার কাছে সরকার এবং বিরোধীদলের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া কেউই চাচ্ছেন না একে অপরের মুখোমুখি হতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কায়দা করে বিরোধীদলের হরতালের ডাক দেয়ার পর মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীকে টেলিফোন করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কায়দা করে করা টেলিফোনটি ধরে বড় বেকায়দায় পড়ে গেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি যদি কায়দা করে প্রথম দিনের হরতাল শেষ করে পরের দু দিনের হরতাল স্থগিত করে সংলাপে বসতে চাইতেন তা হলে বোধকরি প্রধানমন্ত্রীই একটু বেকায়দায় পড়তেন বলে মনে হয়। কী হতো আর কী হতো না- সে প্রসঙ্গ থাক। পাঁচ নেতার গ্রেফতার নিয়ে কথা হচ্ছিলো সে কথায় আসি। কথা হলো উসকানি দাতাদের গ্রেফতার করা হলে যারা ওনাদের উসকানিতে কথিত অপরাধ ঘটিয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করাটাই তো প্রথমে দরকার ছিলো। পুলিশ হয়তো বলবে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। কিম্বা তারা পলাতক রয়েছে। সেক্ষেত্রে বলি হরতালের আগের দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত অতোগুলো গাড়িতে আগুন দেয়া, ককটেল ফাটানো, ভাঙচুর করার ভিডিও ফুটেজ সংবাদ কর্মীদের কাছে ক্যামেরাবন্দি রয়েছে। সেগুলো দেখলেই তো সেইসব অপরাধীদের খুঁজে বের করা যায়। সরকার সেপথে না গিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করতে এতো উদগ্রীব কেন? যারা আগুন দেয়, গাড়ি ভাঙচুর করে, হরতালে পিকেটিং করে তারাই তো একই অপরাধ বারবার করে। ওদেরকে আটকালেই তো নেতাদের উসকানিতেও কাজ হবে না। ইতিহাস বলে নেতৃবৃন্দকে আটকালে আন্দোলন থেমে যায় না বরং তীব্রতর হয়।

 

পোড়খাওয়া আওয়ামী নেতারা সেটা জানে না তা তো নয়, তা হলে কেন এই গ্রেফতার-রিমান্ড? বিএনপির শীর্ষ পাঁচনেতাকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্য এবং তাদেরকে পুলিশি রিমান্ডে নেয়ার পেছনে সরকারের একটা পরিকল্পনা রয়েছে বলে রাজনীতি সচেতনমহলের ধারণা। সেটি হলো চিরদিন ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি থাকতে আগ্রহী প্রায় সর্ব সরকারের মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, বিএনপির জামায়াত নির্ভর রাজনীতির কারণে ক্ষুব্ধ এম.কে আনোয়ার সাহেবদের বাগ মানিয়ে সরকার তাদেরকে নির্বাচনে নামাতে চায়। এমনিতেই যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে দলের অনেক নেতাই দলছুট হয়ে নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়, এমতাবস্থায় দলের নীতি নির্ধারকদের গ্রেফতার করা এবং রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিকমহলে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ, এম.কে আনোয়ার গং এরা নিশ্চয় এমন কোনো অপরাধী নয় যে তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে তাদের কৃত অপরাধের স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছে। সেজন্য প্রশ্ন জাগছে রিমান্ডে নেয়ার পেছনে সরকারের ভিন্ন মতলব নেই তো?