জনজীবনের সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে

আবারও তেল এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০১৭ সালের ১ মার্চ থেকে গ্যাসের এবং ১ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কার্যকর করার পর কাছাকাছি সময়ে তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আসায় তা নানাভাবেই আলোচিত হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ব্যয়বহুল এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করবে সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, আমদানিকৃত এই গ্যাসের সাথে দেশীয় গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করতে হলে দাম বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যমান দরে তেল বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। ফলে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিও তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে যে জ্বালানির দাম আরেক দফা বাড়তে চলেছে তা স্পষ্ট। বলার অপেক্ষা রাখে না, তেল ও গ্যাসের দাম আবারও বাড়লে তা সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়েই দেখা দেবে।
অস্বীকার করা যাবে না যে, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হয় বিশ্ববাজারের সাথে সমন্বয় করে। আমরা লক্ষ্য করি বরাবরই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের দামের সমন্বয় এবং বিপিসির লোকসানি কমানোর কথা বলা হয়। বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে কমাতে আগ্রহী থাকে না বিপিসি, তারা যখন লাভ করে তখন তারা জানানোরও প্রয়োজন মনে করে না। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেই শুরু হয় দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা। এটা অযৌক্তিক। বর্ধিত সব কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। যখন গণশুনানিতে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও দাম বাড়ানো হয়। ফলে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় যে, কার স্বার্থ রক্ষায় এ মূল্যবৃদ্ধি? সাধারণ মানুষের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই সরকার তার খেয়াল খুশিমতো দাম বাড়ায় এমন অভিযোগও পুরনো। এর অবসান হওয়াই যৌক্তিক।
জ্বালানির সাথে গোটা উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পৃক্ত। ফলে তেলের দাম বাড়ালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বাড়বে। সে হিসেবে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে। এছাড়া সেচ ক্ষেত্রে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে। কাজেই এখন তেলের দাম বাড়ালে কৃষি, শিল্পোৎপাদন তথা জনজীবনের সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া এটা নির্বাচনের বছর হওয়ায় এ সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বাড়ালে জনগণের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে ঠিক করতে হবে তারা জনগণকে কী দামে জ্বালানি সরবরাহ করবে। আর সামনে নির্বাচন এটাও সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। অন্যদিকে বিপিসির বিরুদ্ধে যে অস্বচ্ছতার অভিযোগ আছে তাও খতিয়ে দেখা দরকার। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠানের সঠিক নিরীক্ষা হওয়াও উচিত।