চেনা দুর্যোগে দুর্ভোগ মানেই মানানসই নই আমরা

আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস ছিলো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে তথা ঝলমলে রোদ পেতে দেশবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে বিকেল পর্যন্ত। না, চুয়াডাঙ্গাবাসীকে অতোটা অপেক্ষা করতে হয়নি, দুপুরেই আকাশ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে দেখা মেলে ঝলমলে সূর্যের। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আকাশ মেঘে ঢেকে কেমন যেন গম্ভীর হয়ে ওঠে। অবস্থা দেখে বিদায় শ্রাবণে প্রকৃতির মতিগতি বোঝা দুষ্কর হলেও দুর্যোগটা অবশ্যই নতুন নয়।

ষড়ঋতুর দেশে আষাড়, শ্রাবণ ও ভাদ্রে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝাপোট চিরচেনা একধরনের দুর্যোগ। যে দুর্যোগ চেনা, তাকে নিয়ে ভয় কেন? যে দুর্যোগ চেনা, সেই দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো প্রস্তুতি থাকলে ক্ষতি দূরের কথা, ন্যূনতম দুর্ভোগেরও তো কথা নয়। তাহলে আমাদের চেনা ঝাপটেও করুণ দশা ফুটে ওঠে কেন? দুর্ভোগ কেন? কেন চুল উড়োনো স্বস্তির বাতাস অস্বস্তির কারণ হয়, কেন বিদ্যুতবিহীন হয়ে পড়ে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর? অবশ্যই প্রস্ততিতে ঘাটতি। যে ঘাটতির জন্য শুধু বর্তমান নয়, অতীতও বহুলাংশে দায়ী। বিগত দিনে দায়িত্বপালনকারীদের দুরদর্শিতায় ঘাটতি না থাকলে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা অতোটা যাচ্ছে তাই হওয়ার কথা নয়। অর্থে টান? ওটা ব্যর্থতা আড়াল করার অজুহাত। ঠিক কীভাবে বিদ্যুত গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুললে ঝড়-ঝাপটায় বেহাল দশা হবে না, তা জানতে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন স্বচ্ছ প্রজ্ঞাশীল মানুষের যেমন দরকার, তেমনই দরকার দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছা জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। সেরকমভাবে ব্যবস্থা করতে পারেনি মানেই আমরা আমাদের মানিয়ে নেয়ার অনুপযোগী। ফলে ঘুরে ফিরে আসা চেনা দুর্যোগেও পোয়াতে হয় নিদারুণ দুর্দশা। সামান্য ঝাপটেই থেমে যায় কলকারখানার চাকা। বাধাগ্রস্ত হয় উন্নয়ন। যদিও বক্তব্যের ফুলঝুরিতে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যায়। যে জোয়ারে আমজনতা হাবুডুবু অবস্থা।

মনে রাখা দরকার, সহজ শর্তে কলের চাকা অবিরাম ঘোরানোর শক্তির জোগানই পারে গ্রামবাংলাকে বদলে দিতে। বিষয়টি নিশ্চয় দিনবদলের সরকারের বিবেচনাধীন। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের দায়িত্বশীলদের দরকার সরকারের শীর্ষ কর্তাদের সামনে অবহেলিত জনপদের দুর্দশার ছবি তুলে ধরে কৃপা নেয়া। যে কৃপায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে নিশ্চিত হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত। তাতে বাড়বে বিনিয়োগ, গড়বে কলকারখানা, হবে কর্মসংস্থান। স্বনির্ভর হওয়ার গর্বে বুক ভরে উঠবে সবার।