চেকপোস্টে উভয় দেশের কর্মরত কর্তাদের কর্তব্যপরায়ণতা কাম্য

তাও ভালো, এখন সোনার বিপরীতে আসছে ডলার। আগে আসতো গরু আর কাড়ি কাড়ি নগদ টাকা। এসব টাকা নাকি নেশাদ্রব্যসহ নানা প্রকার তুলনামূলক ক্ষতিকর মালামাল কেনার জন্যই পড়শী দেশ ভারতে ঢোকে। তা পাচার করে আনার পর বিভিন্নভাবে পৌঁছে দেয়া হতো চোরাচালান চক্রের রাঘববোয়ালদের হাতে। এখন ওদের হাতেই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ডলার। ডলার আনা হচ্ছে লাগেস বা থলিব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা-গেদে চেকপোস্টে বিজিবির হাতে ধরা পড়া ডলার পাচারকারীদের ৮ জনের ৪টি থলি কেটে পাওয়া ২ লাখ ১৬ হাজার ১শ’ মার্কিন ডলার উদ্ধারের পর বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। উদ্ধারকৃত ডলারের বাংলাদেশী মুদ্রায় মূল্য ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩শ’ টাকা।
চোরাচালান কোনো দেশের জন্যই কল্যাণকর নয় বলেই সীমান্ত প্রহরায় প্রভাবশালী বা সামর্থবান দেশগুলো বিপুল অর্থ ব্যয় করে পাচারের পথ বন্ধ করে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ তাদের সীমান্ত প্রহরায় বেশ কড়া। চোরাচালানের পণ্য কোনটি হবে তা ওদের নীতিনির্ধারকরা নির্ধারণ করে তা ঠেলে দিলে প্রতিরোধে আমাদের পুরো সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওরা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, দিচ্ছে। আমরা? স্বল্প সংখ্যক প্রহরী নিয়ে সেকেলে টহলের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে রয়েছি। অবশ্য, কিছুক্ষেত্রে আমাদেরও সড়ক নির্মাণসহ সীমান্ত প্রহরায় অনন্য দৃষ্টান্তও রয়েছে। যদিও তা অপ্রতুল। তা না হলে প্রতিবেশী দেশের স্বর্ণ চোরাচালানিদের অন্যতম রুট কি আমাদের দেশ হতো? স্বর্ণের বার ভারতে যায়, সোনার তৈরি অলঙ্কারের কিছু অংশ আবার আমাদের দেশে আসে। স্বর্ণকারের অভাব বা কারিগরি অদক্ষতার কারণেই যে সোনার গয়না আসে তাও নয়, গুণগতমান ধরে রাখতে না পারাটাও একটি কারণ।
প্রসঙ্গত: গোমাংসের চাহিদা মেটাতে সীমান্ত কোরিডোরে বিশেষহারে শুল্ক দিলেই পাচার করে আনা গরুর বৈধতা দিচ্ছি আমরা। অথচ গরু কখন পাচার হবে, কখন হবে না তার প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ ওদের নীতি নির্ধারকদের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণেই, আমরা ঘরে ঘরে গরুর ছোটবড় খামার গড়ে তুলেও লোকসানের কারণে তাতে নিরুৎসাহিত হয়েছি, হচ্ছি। গরু পাচারের কথা বলে সীমান্তে গিয়ে অনেকেই ওদের সীমান্তরক্ষীর গুলিতে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে প্রাণ হারাচ্ছি। এটা শুধু প্রাণ হারানোই নয়, জাতির মর্যদার ওপর আঘাতও। অনেকে গরুপাচারকারী সেজে সীমান্তে মাদক, বারুদ ও মারণাস্ত্রও পাচার করে আনার পর তা ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশেই যে শুধু চোরাচালানি হচ্ছে তাও নয়। বৈধভাবে আসা-যাওয়ার মাঝেও দেদারসে হচ্ছে চোরাচালান। যার কথিত নাম লাগেজ পার্টি বা থলিবহনকারী। এদেরই ৮জনের ৪টি ব্যাগ কেটে পাওয়া গেছে চমকে ওঠার মতো পরিমাণের মার্কিন ডলার।
থলিবহনের বাণিজ্য নতুন নয়। তবে এতে প্রতিনিয়তই যে যুক্ত হচ্ছে অভিনবত্ব তা বলাই বাহুল্য। চোরকারবারিদের অভিনব কৌশলকেও হার মানিয়ে চুয়াডাঙ্গাস্থ ৬ বিজিবি সদস্যদের সফল অভিযানকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। যদিও এই পাচারকারীদের মুখোশ উন্মোচনের মূল দায়িত্ব কাস্টম চেকপোস্টে কর্মরত কর্তাবাবুসহ ইমিগ্রেশন পুলিশের। চেকপোস্টের থলিলাগেজের বৈধ-অবৈধতা যাচাইয়ের দায়িত্ব তো ওদেরই। নানা কারণে সুযোগ পায় বলেই থলিবহনকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। এই বৃদ্ধিকে বহুগুণে তথা চক্রাকারে বাড়িয়ে দিচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা সুবিধা। এ সুবিধা বন্ধ করে নয়, চেকপোস্টে উভয় দেশের কর্মরত কর্তাদের কর্তব্যপরায়ণতা কাম্য।