চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত

 

চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত বালক-বালিকা থাকলেও পরবর্তীতে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শুধুমাত্র বালিকাদেরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপদান করা হয়। নারী শিক্ষা সম্প্রসারণেই শুধু নয়, মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অতীত উজ্জ্বল গৌরব রয়েছে। সেই গৌরব শুধু ধুলণ্ঠিতই নয়, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে ও তাদের শাসনে কিছু শিক্ষকের অনিহাও পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি দু শিফটে চলে। প্রভাব ও দিবা শাখায় মোট ছাত্রীর সংখ্যা দু হাজার ২১৫ জন। সহকারী শিক্ষক পদ ৫০টি হলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ২৩ জন। অর্ধেকেরও কম। প্রধান শিক্ষক পদটিও শূন্য। সহকারী প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করলেও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে তিনি পাঠদানই শুধু নয়, প্রশাসনিক ধারাবাহিকতাও ধরে রাখতে পারছে না। প্রতি শিফটের দুটি করে শাখা একীভূত করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। সেটা সম্ভবও নয়। শিক্ষক সঙ্কট অবশ্য একদিনে তীব্র হয়নি। কারণে অকারণে বা বিশেষ তদবিরে শিক্ষক বদলি করলেও তার বিপরীতে শিক্ষক না দেয়ায় একের পর এক পদশূন্য হয়েছে। শূন্যতা বেড়ে বর্তমানে তাথৈ অবস্থা। তাছাড়া বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর পরীক্ষা দেয়ার সময়ে কয়েক শিক্ষকের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণের কারণে আত্মঘাতী হয়। তার প্রতিবাদ জানাতে সহপাঠীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হলে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তদন্তে অভিযুক্ত ৪ শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করার জন্য নানা কৌশলসহ শিক্ষার্থীদের সাথে বৈরী আচরণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ওদের বদলি করা হয়েছে মেহেরপুরে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের প্রেক্ষিতে বদলি হওয়া শিক্ষকেরা যদি চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন তাহলে সেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় চরম মূল্য দিতে হতে পারে। এরকম আশঙ্কা যেমন বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে, তেমনই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শাসনে রাখার আগ্রহও হারিয়েছেন কর্তব্যরত শিক্ষকদের অনেকে। একদিকে শিক্ষক স্বল্পতা, অপরদিকে শাসনে অনিহা বা ভীতি বিদ্যালয়টির পাঠন-পঠনের পরিবেশ কেড়ে নিয়েছে। পরিস্থিতি উত্তরণে বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির তরফে তেমন উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টিও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখতেই শুধু নয়, শিক্ষার মান সময়োপযুগি করতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিযুক্ত করা খুবই জরুরী। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা প্রয়োজন। একজনকে বদলি করার আগে তার বিপরীতে পদায়নের প্রয়োজনীয়তা আদেশদাতা কর্তার নিশ্চয় অজানা নয়। তাছাড়া শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর নীতিমালা বা জাকিরকৃত প্রজ্ঞাপন মেনে চলা হচ্ছে কি-না তা দেখা প্রশাসনেরই দায়িত্ব। অবশ্য সব কিছুর আগে দরকার বিদ্যালয়ের শিক্ষককে শিক্ষকতা করার মতো মানসিকতাসহ শিক্ষাদানের ও শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ।