চুয়াডাঙ্গায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মিছিল ও প্রেসক্লাবে বর্বরোচিত হামলা

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। একদল যুবক ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল করে একের পর এক অটোরিকশা ভাঙচুরের পর চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে হামলা চালায়। চার সাংবাদিকের প্রাণনাশের চেষ্টা করে তারা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রেসক্লাবের থাইগ্লাস, চেয়ার-টেবিলসহ সাংবাদিকদের ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। কেন? ‘শহরে তাণ্ডব চালাবো, যা ইচ্ছে তাই করবো- কেউ কিছু বলতে পারবে না’ এ জন্যই কি আগাম হুমকি? চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা তো কখনোই কোনো হুমকি-ধামকি বা চোখ রাঙানিতে সত্য প্রকাশে পিছুপা হননি। এরপরও কেন হামলা? হামলার সময় পুলিশ ছিলো কোথায়?

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে যখন ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একদল যুবক স্লোগান দিয়ে একের পর এক অটোরিকশা ভাঙচুর করলো, প্রেসক্লাবে তাণ্ডব চালালো, তখন পুলিশ কোথায় ছিলো? অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত যুবকদল ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের স্লোগান দিয়েছে বলে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিলো? যে দলেরই মুখোশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার উদ্দেশে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করুক তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না? চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিপরীতে ওয়াপদার ভেতর থেকে সজ্জিত হওয়ার পর কবরী রোড হয়ে শহীদ হাসান চত্বর ঘুরে কোর্টমোড়ে যেতে অবশ্যই সশস্ত্র মিছিলকারীদের থানা অতিক্রম করতে হয়েছে। এরপরও কি পুলিশের নজরে পড়েনি? নাকি ওরা ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের একাংশ বলে পুলিশ তাদের বিশেষ নিরাপত্তা দিয়েছে? যে শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মিছিল বের করা হয়, সেই শহরে পুলিশ থাকলে আর কিছু না হলেও অন্তত প্রতিরোধ করা হতো। হয়নি। ওরা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়েছে। যখন হামলা চালায় তখন প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন চলছিলো। প্রকাশ্যে নগ্ন হামলার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হারিয়ে সুধীসমাজ সত্যিই কিংকর্তব্য বিমূঢ়। কোথায় আছি আমরা। এ উপত্যকা কি আমাদের জনপদ?

 

প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে মোটরসাইকেল, পার্টিশনের থাইগ্লাস, মোটরসাইকেল, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরসহ সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়র, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ান। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উত্থাপিত হয়। পুলিশ সুপার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও দেন। গতরাতে কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অথচ যে পুলিশদল গতকাল শহরে টহলে তথা অস্ত্রধারীদের মিছিলের পেছনে ছিলো সেই দলের কর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অবশ্য পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, মিছিলের পেছনে কোনো টহল পুলিশ ছিলো না। বিএডিসি খামারে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় সেখানে বাড়তি নিরাপত্তার কাজে পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে। এ দাবি দায় এড়ানোর অজুহাত হলেও জেলা শহরে দিবালোকে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মিছিল এবং একের পর এক ভাঙচুরসহ প্রেসক্লাবে তাণ্ডব রোধের ব্যর্থতা পুলিশ অস্বীকার করবে কীভাবে? সভ্য সমাজে পুলিশের এহেন দায়িত্বহীনতা শুধু লজ্জিতই করে না, পুলিশ দিন দিন আস্থাহীনতার কতোটা তলানিতে তারও প্রমাণ মেলে।

 

চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা সব সময়ই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুললেও হাল ছাড়েননি। কারো চোখ রাঙানিতে থামাননি সত্য প্রকাশের কলম। কোনো প্রকারের উসকানি ছাড়াই প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে, ভাঙচুর তছনছ করে কলম থামানোর অপচেষ্টা? কখনোই সফল হয়নি, হয় না, হবে না। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গার প্রেক্ষাপটে তো নয়ই। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব আন্দোলন শুরু করেছে। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদসভাসহ বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি মামলা করেছে। আন্দোলন কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সুশীল সমাজ নিশ্চয় পাশে থাকবে।