চুয়াডাঙ্গায় দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা

চুয়াডাঙ্গায় সকল ধর্মের মানুষ মিলে মিশে বসবাস করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ বললে কোনো অংশে ভুল বলা হয় না। ধর্ম যার যার সমাজই শুধু নয় উৎসবও যেন সবার। যে চুয়াডাঙ্গায় চমৎকার পরিবেশ, সেই চুয়াডাঙ্গার হরিজন সম্প্রদায়ের কালিপূজা মণ্ডপে গিয়ে একজন মাতাল ভেঙেছে কালিমূর্তির নথসহ নাক। মাতাল হলেও তাকে হরিজনদের একজনও কিছু বলেনি, পুলিশে খবর দিয়ে সত্যিই দায়িত্বশীলতারই পরিচয় দিয়েছেন। তবে মহল্লায় বসে মদ বিক্র করা এবং সেই সুযোগ দেয়া নিশ্চয় দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
সমাজের সকল মানুষ সমান নয়, সকলের দায়িত্বও এক নয়। যদিও কে কোথায় জন্মেছে, সেটার চেয়ে অধিক গুরুত্বের বিষয়টি হলো তিনি কতোটা উঠতে পেরেছেন। এ জন্যই বলা হয়, আপনি যদি বস্তিতে জন্মগ্রহণ করেন তাহলে সেটা আপনার নিয়তি, কিন্তু আপনি যদি পরিণত বয়সেও বস্তির বাসিন্দাই থাকেন তাহলে সেটা নিশ্চয় আপনার কর্মফল। আমাদের সমাজের হরিজন সম্প্রদায়ের অনেকেই আছেন যারা কর্মের গুণে অনেক উঁচুতে উঠেছেন, বদলে নিতে পেরেছেন জীবন, জীবনযাত্রার মান। আর যারা গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে নেশায় বুদ হয়ে পুরো জীবনটাই সপে দিয়েছেন ভাগ্যের ওপর তাদের প্রায় সকলেই বলে থাকেন, নোংরা পরিষ্কার করার জন্য জন্মেছি, সেই থেকেই তো জ্বলছি! এদের কেউ কেউ নিজেদের মদপানের অনুমোদনপত্রের বদৌলতে বাড়ি বসেই দেদারছে মদ বিক্রি করে আসছেন। ওদের খোদ্দের সমাজের অনেক নামি-দামি পরিবারে জন্ম নেয়া সাবালক সন্তান যেমন, তেমনই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলে দাবি করাদেরও অনেকে রয়েছে। তা না হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের চিহ্নিত কয়েকটি স্থানে দিন-রাত সমান তালে প্রকাশ্যে কি অবৈধভাবে মদ বিক্রির উৎসব চলতে পারে?
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মধ্যবর্তী স্থানটির নাম মুক্তিপাড়া। এ পাড়ার একদিকে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের বেশকটি পরিবারের বসবাস। অবশ্য কয়েকটি পরিবার স্থান পরিবর্তনও করেছে। মুক্তিপাড়ায় এবারেও কালিপূজার আয়োজন করা হয়। পূজা আর্চনার প্রায় সব আনুষ্ঠানিকতাই সম্পন্ন হয় একদিন আগে। শনিবারই বিসর্জনের কথা ছিলো। একদিন পিছিয়ে রোববার বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগের রাতে তথা গতপরশু রাত ১০টার দিকে এ মণ্ডপের কালিমূর্তির নাকের নথসহ নাকের অংশ ভেঙে দেয়া হয়। বাংলাদেশ হরিজন মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলছেন, দৃশ্য দেখে একজন চিৎকার করে। আমরা সকলে ছুটে গিয়ে দেখি যে ব্যক্তি ভাঙচুর করেছে সে মণ্ডপের পাশেই রয়েছে। ফলে তাকে হরিজন পল্লিতে রেখেই পুলিশে খবর দেয়া হয়। চুযাডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পরও তার মাতলামি অব্যাহত ছিলো। লিটন শেঠ নামের ওই ব্যক্তি হরিজন পল্লিরই অদূরবর্তী স্থানের বাসিন্দা। ঘটনার আগে ওই পল্লিরই যে বাড়ি মদ বিক্রি হয় সেখানে বসেই নাকি মদ পান করেছে সে।
মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশি তদন্ত চলছে। সম্প্রীতির চুয়াডাঙ্গায় মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একজন কোনোভাবে পার পেলে পূজা আর্চনার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাই শুধু বাড়বে না, সম্প্রীতি নিয়ে গর্ব করা চুয়াডাঙ্গার গর্ব মিশবে ধুলোর সাথে। সচেতন সমাজ নিশ্চয় এটা কামনা করে না। অবশ্যই দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হোক, একই সাথে মদ বিক্রি করে যারা পরিবেশ বিঘ্নিত করছে তাদের বিরুদ্ধেও নেয়া হোক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। অবহেলা-অবজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমাজ।