চিকিৎসা বিভাগে প্রতারণার খেসারত দিতে হয় জাতির

ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসক তথা প্রতারক শনাক্ত করতে যদি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা লাগে তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রশাসন কি করছে? ভুয়া ডিগ্রিধারী প্রতারকের কবল থেকে রোগী সাধারণকে রক্ষা করতে এনএসআই’র পদক্ষেপকে মশা মারতে কামান দাগার মতোই নয় কি? দেশে এখন এরকমই হচ্ছে। গতপরশু চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালের প্রধান ফটকের পাশেই গড়ে তোলা একটি ডায়াগনস্টিকে এনএসআই’র জেলা কর্তার নেতৃত্বে বা নিদের্শনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডিগ্রিধারী বদ্যিসহ ডায়াগনস্টিকের স্বত্বাধিকারীকে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করে। আদালত ভুয়া ডিগ্রিধারীকে ৬ মাসের কারাদ-, ডায়াগনস্টিকের মালিককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা ১৫ দিনের কারাদ-াদেশ দেন। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় গুরুত্বসহকারে এ প্রতিবেদন যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই ঝিনাইদহেও এক ভুয়া চিকিৎসককে ধরে জেল-জরিমানার খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রতারকদের শাস্তি সব সময়ই সমাজের জন্য ইতিবাচক।
ভুয়া ডিগ্রিধারী বা ভুয়া চিকিৎসক ধরে ভ্রাম্যমাণ আদলতে জেল-জরিমানা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালত বহু ভুয়া চিকিৎসকসহ তাদের নিয়ে রোগী সাধারণের সাথে প্রতারণামূলক অর্থবাণিজ্যের জন্য জরিমানা করা হয়েছে। সঙ্গতঃ প্রশ্ন, এরপরও এ ধরনের প্রতারণামূলক অর্থবাণিজ্য বন্ধ হয়নি কেন? অনিয়ম দুর্নীতি উন্নয়নশীল বা নি¤œ আয়ের দেশ সমূলে উৎপাটন অলিক বটে, তাই বলে ব্যাপকতা রোধ অসম্ভব নয় নিশ্চয়। আমাদের সমাজে তথা দেশে ভুয়া ডিগ্রিধারী ভুয়া চিকিৎসকের অপচিকিৎসা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়ার আড়ালে অবশ্যই শনাক্তকরণ পদ্ধতিসহ স্বাস্থ্য প্রশাসনে অপ্রতুলতা, উদাসীনতা এবং জবাবদিহিতায় যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে। তা না হলে চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালের প্রধান গেটের অদূরেই কি একজন ভুয়া ডিগ্রিধারী প্রচার-প্রচাণা চালিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাততে পারে? সদর আধুনিক হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তথা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। স্বাস্থ্য প্রশাসন ওই ভুয়া ডিগ্রিধারীকে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করার আগেই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাদের চুয়াডাঙ্গাস্থ কর্মকর্তার পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে। একই সাথে এ ঘটনার মধ্যদিয়ে জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসনের ব্যর্থতাও কি ফুটে ওঠে না? অজুহাতে অনেক কিছু আড়াল করা গেলেও জাগ্রত বিবেকের দংশন থেকেই যায়। তাছাড়া একজন ভুয়া চিকিৎসক, ভুয়া ডিগ্রিধারীর কারণে প্রতারিত রোগী জটিল থেকে জটিল রোগে ভুগে অকাল মৃত্যুপথযাত্রী হতে বাধ্য হয়। একজন প্রতারকের দেয়া চিকিৎসার হাল বা রোগীর পরিণতি দেখে দেশের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থটাই পড়ে আস্থাহীনতার মধ্যে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতি। ফলে প্রকৃত চিকিৎসকদের এবং স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে উদাসীনতা মানে নিজেদের অস্তিত্ব নিজেদের হাতে আস্তাকুঁড়েই নিক্ষেপ করা।
দেশে ভুয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ভুয়া চিকিৎসক, ভুয়া ডিগ্রিধারী শনাক্তের পদ্ধতিতে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে কোর্ড নম্বর সার্চ করলেই তার আদ্যপান্ত বের হওয়ার কথা। অবশ্য এখনও এ পদ্ধতি সর্বক্ষেত্রে পূর্ণতা পায়নি। প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তার আগে ভুয়া পরিচয়ের আড়ালে যারা প্রতারণার ফাঁদ পেতে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের শনাক্ত করার গুরুদায়িত্বটা মূলত সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্তাদের ওপরই বর্তায়। প্রশাসানকি দায়িত্বে থাকা অন্যদেরও মুখ ঘুরিয়ে থাকলে চলে না। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের অদূরেই গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিকে ভুয়া ডিগ্রিধারীর প্রতারণা রোধে এনএসআই’র পদক্ষেপ প্রশংসার হলেও এরকম পদক্ষেপ মূলতঃ স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাছেই প্রত্যাশা করি আমরা। অন্যায়ের সাথে আপস কিংবা কোনো কারণে কতর্ব্যে অবহেলা জাতির অগ্রযাত্রায় চরম বাধা। ফলে অন্যায়কারী সে যেই হোক, তার শাস্তি এমন হওয়া দরকার যা দেখে অন্যায় করা অন্যরাও নিজেদের সুধরে নিতে বাধ্য হবে।